কাশ্মীরে ফারুক আবদুলস্নাহ গ্রেপ্তার

'পাবলিক সেফটি অ্যাক্টে' গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে তিনিই প্রথম কোনো ভারতপন্থি কাশ্মীরি রাজনীতিক; যাকে এই আইনে গ্রেপ্তার করা হলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কাশ্মীরে যাবেন প্রধান বিচারপতি

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুলস্নাহ
ভারতের বিতর্কিত 'পাবলিক সেফটি অ্যাক্টে' অধিকৃত কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও এমপি ফারুক আবদুলস্নাহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা। দেশটির বিতর্কিত এই আইনে কোনো ব্যক্তিকে অভিযোগ ছাড়াই দুই বছরের বেশি সময় ধরে আটকে রাখা যায়। সংবাদসূত্র : ইনডিয়া টাইমস, এনডিটিভি, এপি, টাইমস অব ইনডিয়া ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিক গত ৫ আগস্ট থেকে গৃহবন্দি আছেন। তার এই বন্দিদশা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না; তা জানতে চেয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন তামিলনাড়ুর এমডিএমকে নেতা ভাইকো। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এস এ বোবদে এবং বিচারপতি এসএ নাজিরের বেঞ্চে শুনানি শুরু হলে কেন্দ্র ও জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। সোমবার যখন এই আবেদনের শুনানি শুরু হয়, ঠিক তার কিছুক্ষণ পর ফারুক আবদুলস্নাহকে বিতর্কিত পাবলিক সেফটি আইনে গ্রেপ্তার দেখায় স্থানীয় প্রশাসন। ৮১ বছর বয়সী প্রবীণ এই রাজনীতিক জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন। সোমবার তাকে কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফারুক আবদুলস্নাহই প্রথম কোনো ভারতপন্থি কাশ্মীরি রাজনীতিক; যাকে বিতর্কিত পাবলিক সেফটি আইনে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তার ফারুক আবদুলস্নাহর বাবা শেখ আবদুলস্নাহ কাশ্মীরের তুমুল জনপ্রিয় রাজনীতিক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে আবদুলস্নাহর সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিতর্কিত এই আইনের প্রয়োগ শুরু হয়। বিতর্কিত এই আইনে গত দুই দশকে অন্তত ২০ হাজার কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিতর্কিত পাবলিক সেফটি আইনকে 'নীতিহীন আইন' বলে মন্তব্য করেছে। অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট করতেই ভারত এই আইনের অপব্যবহার করছে। গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর এই রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ফারুক আবদুলস্নাহ, ওমর আবদুলস্নাহসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েক ডজন রাজনীতিক ও মানবাধিকার কর্মীকে গৃহবন্দি করে রেখেছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার। আরও কয়েক হাজার বেসামরিক কাশ্মীরিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কাশ্মীরে যাবেন প্রধান বিচারপতি জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুলস্নাহকে মুক্তির প্রশ্নে কেন্দ্র এবং জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে নোটিশ পাঠিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে নিজে কাশ্মীরে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এছাড়া কাশ্মীরকে অবিলম্বে স্বাভাবিক করে তোলারও নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে সব ধরনের প্রচেষ্টা নিতে বলেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে ওই অঞ্চলের জন্য গ্রহণ করা সব পদক্ষেপের ক্ষেত্রে ভারতের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিতেও সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ জানায়, 'আমরা জম্মু ও কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা নিতে নির্দেশনা দিচ্ছি। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট উপায়ে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফেরানো হোক, এমনটাই চাইছি আমরা।' কাশ্মীরের নিষেধাজ্ঞাগুলোর নিষ্পত্তি সেখানকার হাইকোর্টের মাধ্যমে করা যেতে পারে বলেও বিচারকরা মন্তব্য করেছেন। এদিকে, বিধিনিষেধ চলাকালে উপত্যকাটিতে কোনো প্রাণহানি হয়নি বলে দিলিস্ন সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়। গত ৫ আগস্টে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও এলাকাটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করার পর 'সহিংসতা এড়াতে' সেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, 'একটি বুলেটও খরচ হয়নি, কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।' সব শুনে অ্যাটর্নি জেনারেল কেকে ভেনুগোপালকে সুপ্রিম কোর্ট বলে, জাতীয় নিরাপত্তা অটুট রেখে উপত্যকাকে স্বাভাবিক করতে সচেষ্ট হোক কেন্দ্রীয় সরকার ও জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। প্রধান বিচারপতির কথায়, 'মানুষ যদি হাইকোর্টে যেতে না পারে তা খুব খুব গুরতর বিষয়। আমি নিজে শ্রীনগরে যাব।'