সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলা

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না যুক্তরাষ্ট্র :ট্রাম্প

এটি সৌদি আরবের ওপর হামলা, আমাদের ওপর নয়, তাদের রক্ষার কোনো প্রতিশ্রম্নতি দিইনি :ট্রাম্প উত্তেজনা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ন্যাটোপ্রধানের

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
সৌদি আরবের দুটি বৃহৎ তেলক্ষেত্রে হামলার পেছনে ইরানের সংশ্লিষ্টতার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করা হলেও এই মুহূর্তে যুদ্ধে জড়াতে চান না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এমন সময় ট্রাম্প এ মন্তব্য করলেন, যখন অনেক বিশ্লেষকই আশঙ্কা করছিলেন, সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে তেহরানের হামলার অজুহাতে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি গত শনিবারের ওই হামলায় বিশ্বের বৃহত্তম তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এতে কয়েক দশকের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের বাজার চড়া হয়। গত বছর ট্রাম্প ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে তেহরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করলে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। ইরান সমর্থিত বাহিনীকে সমর্থন দেয়া বন্ধ করানোর জন্যও তেহরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় ওয়াশিংটন, এসব বাহিনীর মধ্যে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিরাও আছে, যাদের সঙ্গে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলো চার বছর ধরে লড়াই করছে। সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার দায় হুতিরা স্বীকার করলেও এর পেছনে ইরান আছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের, এটি তদন্ত করেও দেখছে তারা। সৌদিতে হামলা নিয়ে নিজেদের দাবির পক্ষে ট্রাম্প বলেন, 'এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবেই সেটি এমনই দেখাচ্ছে। তারপরও সৌদি আরবের পক্ষ হয়ে তিনি লড়াইয়ে জড়াতে চাইছেন না।' তিনি আরও বলেন, 'আমি এমন একজন মানুষ, যুদ্ধ করতে চাই না।' যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরিসহ দেশটির বেশ কয়েকজন মন্ত্রী হামলার জন্য তেহরানকে দায়ী করেছেন। পম্পেও এবং অন্যরা শিগগিরিই সৌদি আরব সফর করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তেলক্ষেত্রে হামলার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা 'হামলার জন্য প্রস্তুত আছে' বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু এর একদিন পর সোমবার তিনি জানান, 'তেমনটি করার কোনো তাড়া নেই। আমাদের অনেক বিকল্প আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে আমি বিকল্প খুঁজছি না। এটি কে করেছে, তা নিশ্চিতভাবে বের করতে চাই আমরা।' এছাড়া সৌদিদের রক্ষা করার কোনো প্রতিশ্রম্নতি তিনি দেননি বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, 'আমি সৌদিদের এ ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রম্নতি দিইনি। তাদের সঙ্গে আমাদের বসতে হবে এবং করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটি সৌদি আরবের ওপর হামলা, আমাদের ওপর নয়। তবে আমরা নিশ্চিতভাবেই তাদের সাহায্য করবো।' ওই হামলার কারণে সৌদির দৈনিক তেল উৎপাদন কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। এতে বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন পাঁচ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সৌদির তেল উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর কার্যক্রম সম্পর্কে জ্ঞাত দুটি সূত্র জানিয়েছে। উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ ন্যাটোপ্রধানের এদিকে, সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার পর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ কর্মকর্তা জেন্স স্টলটেনবার্গ। ইরান পুরো মধ্যপ্রাচ্যকেই 'অস্থিতিশীল করে তুলছে' বলেও মন্তব্য করেন তিনি। স্টলটেনবার্গ বলেন, 'এ ধরনের হামলা ঠেকাতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা; কারণ এ ধরনের হামলা পুরো অঞ্চলের জন্য নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।' এর আগে সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সৌদির তেলশিল্পের কেন্দ্রস্থলে 'নজিরবিহীন' হামলায় ক্ষয়ক্ষতির স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে। ওয়াশিংটন হামলার দায় ইরানকে দিলেও তেহরান প্রথম থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি হামলাটিকে 'ইয়েমেনি জনগণের পাল্টা আঘাত' হিসেবেও অভিহিত করেছেন। শনিবার হামলার পরপরই ইয়েমেনের ইরান-ঘনিষ্ঠ হুতিরা এর দায় স্বীকার করে। কিন্তু হামলার মাত্রা, ব্যাপকতা ও লক্ষ্যস্থলে নির্ভুল আক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনি বিদ্রোহীদের ওই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইরত সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটেরও ধারণা, হামলার অস্ত্র তেহরানই সরবরাহ করেছে।