সরকারবিরোধী প্রথম বিক্ষোভ

প্রেসিডেন্ট সিসির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল মিসর

স্বেচ্ছায় নির্বাসিত মোহাম্মদ আলির আহ্বানে রাস্তায় নামে মানুষ

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি
প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল মিসর। শুক্রবার সন্ধ্যার পর দেশটির বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারী। এ সময় তারা 'ভয় নয়, জেগে ওঠো, সিসি হটাও' ইত্যাদি স্স্নোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে তোলে। রাজধানী কায়রোর তাহ্‌রির স্কোয়ার ছাড়াও আলেকজান্দ্রিয়া, সুয়েজের মতো বড় শহরগুলোতেও সিসিবিরোধী বিক্ষোভ হয়। সংবাদসূত্র : বিবিসি, মিডল ইস্ট আই তাহরির স্কোয়ার অভিমুখী বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালায় সাদা পোশাকের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ধরপাকড়ের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাসও নিক্ষেপ করা হয়। বিক্ষোভের তীব্রতায় বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। স্বেচ্ছায় নির্বাসিত মিসরীয় ব্যবসায়ী ও অভিনেতা মোহাম্মদ আলির এক আহ্বানের পর রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করে মিসরের সাধারণ মানুষ। জেনারেল সিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মানুষকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন মোহাম্মদ আলি। তিনি বলেন, 'সাধারণ মানুষ যেখানে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত, সেখানে সিসি ও তার কর্মকর্তারা জনগণের বিপুল অংকের অর্থ অপচয় করছে।' তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগকে 'মিথ্যাচার' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রেসিডেন্ট সিসি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় মোহাম্মদ আলি বলেন, 'সিসি যদি বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না দেন, তবে শুক্রবার মিসরের জনগণ রাজপথে নেমে আসবে।' তার কথামতো এদিন ঠিকই মানুষ রাজপথে নেমে আসে। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকেই জেনারেল সিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভিডিও বার্তা দিতে শুরু করেন মোহাম্মদ আলি। অনলাইনে এসব ভিডিও লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের একজন পুরোধা হয়ে উঠেছেন স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এ ব্যবসায়ী। ২০১২ সালের ৩০ জুন মিসরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহামেদ মুরসি। এর এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সেনা অভু্যত্থানের মাধ্যমে মুরসিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান জেনারেল সিসি। প্রতিবাদে মুরসি সমর্থকরা রাস্তায় নামলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ব্রাদারহুডের প্রায় হাজারখানেক নেতাকর্মী। অভু্যত্থানে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো। সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে মুরসি সমর্থকদের 'সন্ত্রাসী' হিসেবে আখ্যায়িত করে সৌদি আরব। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করে। মৃতু্যদন্ড দেয়া হয় দলটির প্রায় হাজারখানেক নেতাকর্মীকে। গ্রেপ্তার করা হয় কয়েক হাজার মুরসি সমর্থককে। কারাগারে পাঠানো হয় মিসরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে। অন্তরীণ অবস্থাতেই কারাগারের খাঁচায় মৃতু্য হয় তার। কঠোর গোপনীয়তায় তাকে দাফনে পরিবারকে বাধ্য করা হয়। বাবার মৃতু্যর পরপরই রহস্যজনকভাবে মারা যান মুরসির ২৪ বছরের ছেলে আবদুলস্নাহ মুরসি। অনেকের আশঙ্কা, বাবার মৃতু্যর জন্য সরকারকে দায়ী করায় তাকে কৌশলে হত্যা করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ইয়েহিয়া ঘানেম বলেন, 'মিসরে এখন যা ঘটছে, তা সেখানে দীর্ঘদিনের নিপীড়নের ফল। শুক্রবারের বিক্ষোভ দেশটির মানুষের আন্দোলনে গতি সঞ্চার করবে।'