মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা

মার্কিন বাহিনীকে হুঙ্কার রুহানির

তাদের কারণে উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে :ইরানের প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ শুরু হলে কোনো সীমানা থাকবে না : জারিফ হামলায় ইরান দায়ী নিশ্চিত হলে জবাব দেবে সৌদি আরব

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি
যাযাদি ডেস্ক সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়ার পর উপসাগরীয় অঞ্চল ছাড়তে মার্কিন বাহিনীকে হুঙ্কার ছুড়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। শনিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, 'বিদেশি (মার্কিন) সেনারা উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে ফেলেছে।' রুহানি বলেন, 'বিদেশি সেনারা সবসময় এই অঞ্চলের জন্য বেদনাদায়ক ও রহস্যময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং তাদের অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় ব্যবহার হওয়া উচিত নয়।' সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স সম্প্রতি সৌদির আরবের দুটি তেল স্থাপনায় এক ডজনের বেশি ড্রোন হামলায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছে। তবে তেহরান সৌদিতে হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আগামী অধিবেশনে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য নতুন একটি প্রস্তাব তুলে ধরবে বলে জানিয়েছেন রুহানি। ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর চলতি বছরে তেহরান-ওয়াশিংটন চরম উত্তেজনা শুরু হয়। ইরানের বিরুদ্ধে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। যদিও এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। কিন্তু সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য উপসাগরীয় অঞ্চলে রিয়াদের অন্যতম চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে দায়ী করছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমাদের এই অঞ্চল এবং মানুষের জন্য সমস্যা এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশি বাহিনী।' এ ধরনের সেনা মোতায়েনের কারণে অতীতে বিপর্যয় নেমে এসেছিল বলে স্মরণ করে দিয়ে তিনি মার্কিন বাহিনীকে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। যুদ্ধ শুরু হলে কোনো সীমানা থাকবে না : জারিফ এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে যদি কেউ আগ্রাসন শুরু করে, তাহলে তার জবাব এতটা ভয়াবহ হবে যে, সেই যুদ্ধ কোনো সুনির্দিষ্ট ভূখন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইরানের বিরুদ্ধে যে দেশই যুদ্ধ শুরু করুক না কেন, তারা যুদ্ধ শেষ করতে পারবে না। যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে, এমনকি মধ্যপ্রাচের বাইরেও সেই যুদ্ধ ছড়িয়ে যাবে। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল 'সিবিএস নিউজ'র 'ফেস দ্য নেশন' অনুষ্ঠানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শনিবার এসব বলেন তিনি। সিবিএস টেলিভিশন রোববার সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে 'অবাধ্য দেশ' ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ইরানি মিশনে তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সিবিএস টেলিভিশনকে জাভেদ জারিফ বলেন, আরামকো তেল স্থাপনায় হামলার পর সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে যে সেনা মোতায়েন করতে যাচ্ছে, তা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখবে না। ইয়েমেন যুদ্ধের সমাধানই মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ। উপস্থাপক মার্গারেট ব্রেনান এ পর্যায়ে জারিফের কাছে জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র যে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে, সে ব্যাপারে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি কী? জারিফ বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে তাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞা ছাড় নিতে হয়েছে। হামলার জবাব দেবে সৌদি আরব এদিকে, আরামকোর তেল স্থাপনায় হামলার জন্য ইরান দায়ী, তদন্তে এটি নিশ্চিত হলে জবাব দেয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। শনিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর এ মন্তব্য করেন। তবে ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা জানাতে অস্বীকার করে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তদন্তের ফলের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। হামলাটি ইয়েমেন থেকে যে করা হয়নি, এটি নিশ্চিত আমরা, হামলাটি উত্তর দিক থেকে হয়েছে। তদন্তকারীরাই এটি প্রমাণ করবে।' হামলার পরপরই বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারী দেশ সৌদির দৈনিক তেলের উৎপাদন কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। এতে বিশ্বের দৈনিক তেল সরবরাহ পাঁচ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বেড়ে যায়।