খাশোগি হত্যাকান্ড

দায় স্বীকার সৌদি যুবরাজের

ম যুক্তরাষ্ট্রের পিবিএসের এক তথ্যচিত্রে এ কথা স্বীকার যুবরাজ সালমানের ম হত্যাকান্ডের এক বছর পূর্তিতে ১ অক্টোবর প্রচার করা হবে পুরো তথ্যচিত্রটি

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মোহাম্মদ বিন সালমান জামাল খাশোগি
সাংবাদিক জামাল খাশোগির চাঞ্চল্যকার হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছেন সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচার মাধ্যম 'পিবিএস' চ্যানেলে প্রচারিত হতে যাওয়া এক প্রামাণ্যচিত্রে এ কথা স্বীকার করেন তিনি। খাশোগি হত্যার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ১ অক্টোবর প্রচার করা হবে ওই তথ্যচিত্রটি। তবে তার আগেই ছোট একটি অংশ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে যুবরাজকে বলতে শোনা যায়, 'খাশোগি হত্যার সব দায় আমার। কারণ এটা আমার দায়িত্বের অধীনেই ঘটেছে।' সাক্ষাৎকারটি সৌদি রাজধানী রিয়াদে ধারণ করা হয়েছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, টাইমস অব ইনডিয়া খাশোগি হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে মার্কিন দাতব্য সংস্থা গণসম্প্রচার সার্ভিসের (পিবিএস) মার্টিন স্মিথকে সৌদি যুবরাজ সালমান বলেন, 'এটা আমার নজরদারিতে ঘটেছে। সব দায় আমার, কারণ যেহেতু এটা আমার অধীনেই ঘটেছে।' 'সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি' শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রটির প্রাক-প্রচার নিরীক্ষা থেকে এই তথ্য জানা গেছে। তার অজান্তেই কীভাবে এই ঘটনা ঘটলো, জানতে চাইলে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, 'আমাদের দুই কোটি মানুষ আর ৩০ লাখ সরকারি কর্মচারী রয়েছে।' হত্যাকারীরা সরকারি বিমান ব্যক্তিগতভাব কীভাবে ব্যবহার করেছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা এসব তদারকি করেন, আর তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত। এটার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।' দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত বছরের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসু্যলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাশোগি। তিনি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এই সাংবাদিক সৌদি আরবে ফেরার বিষয়ে রিয়াদের চাপ অগ্রাহ্য করে আসছিলেন। প্রথমে রিয়াদের পক্ষ থেকে খাশোগিকে হত্যার কথা অস্বীকার করা হলেও তুরস্কের সংবাদ মাধ্যমগুলো সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ হাজির করতে থাকে। বিশ্বখ্যাত ওই সাংবাদিকের হত্যাকান্ড নিয়ে এর আগে প্রকাশ্যে কথা বলেননি সৌদি আরবের কার্যত নেতা মোহাম্মদ বিন সালমান। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও পশ্চিমা দেশগুলোও বলে আসছে, এই হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা সৌদি যুবরাজ। তবে রিয়াদের কর্মকর্তাদের দাবি, এতে তার কোনো ভূমিকা ছিল না। এই হত্যাকান্ডের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন সৌদি যুবরাজ ও তার ঘোষিত অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা। সমালোচনার পর এখন পর্যন্ত তিনি ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রও সফর করেননি। খাশোগি হত্যায় সন্দেহভাজনদের বিচারের মুখোমুখি করতে তুরস্ক তাদের প্রত্যর্পণের দাবি করে আসছে। তবে তা অগ্রাহ্য করে সৌদি আরব নিজেই এই ঘটনায় ১১ কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করেছে। তবে বিচারের মুখোমুখি হওয়া ১১ জনের মধ্যে নেই সৌদি যুবরাজের মিডিয়াবিষয়ক উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানি। সৌদি কনসু্যলেটে এই হত্যাকান্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন ওঠে। এতে বিশ্বজুড়ে যুবরাজের ভাবমর্যাদা যেমন প্রশ্নের মুখে পড়েছে, তেমনি সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী সৌদি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে তার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাও বাধার মুখে রয়েছে। ধর্মীয় নীতিতে গড়ে ওঠা সৌদি সমাজকেও উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সৌদির এ প্রভাবশালী যুবরাজ। প্রথম দিকে ওই হত্যাকান্ডে যোগসাজশের কথা অস্বীকার করে দুর্বৃত্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন সৌদি কর্মকর্তারা। সরকারি কৌঁসুলি বলেন, তখনকার গোয়েন্দা উপপ্রধান তাকে প্রত্যাবাসনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময়ের শীর্ষ রাজকীয় উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানি স্কাইপের মাধ্যমে খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেন। অভিযানের আগে খাশোগির তৎপরতাবিষয়ক আততায়ী দলকে তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। গত জুনে এক সৌদি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, খাশোগি হত্যাকান্ডে দায়ীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে রিয়াদকে চাপে রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। খুবই গোপনীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১১ সৌদি সন্দেহভাজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটা শুনানি হয়েছে মাত্র। এ ঘটনার তদন্ত করতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট খাশোগিকে গত বছরের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসু্যলেটে সবশেষ দেখা গিয়েছিল। তার মরদেহ কেটে টুকরা টুকরা করে ওই ভবন থেকে সরানো হয়েছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়। এ পর্যন্ত তার মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।