হতাশ দলের নবীনরা

প্রবীণদের কব্জায় কংগ্রেস

ম দাপট ধরে রাখতে স্থায়ীভাবে সভাপতির পদে সোনিয়াকে বসাতে মরিয়া প্রবীণরা ম রাহুল নিজেই প্রবীণদের চালের কাছে হেরে পিছু হটেছেন

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক একের পর এক ব্যর্থতায় দিন দিন যেন অতলেই হারিয়ে যাচ্ছে ভারতের সর্বপ্রাচীন দল কংগ্রেস। একসময় যাদের দাপুটে বিচরণে মুখর ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, এখন তাদের অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি। লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলটির তখনকার সভাপতি রাহুল গান্ধী ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করতে পারেনি তারা। দলটির এমন ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে প্রবীণ নেতাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ও সদিচ্ছার অভাব। সোনিয়া গান্ধীকেই সভাপতি পদে রেখে দিয়ে কংগ্রেসকে চালাতে চাইছেন তারা। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ এমনিতেই কংগ্রেসের রাজনীতিতে কথাটা প্রায়ই শোনা যেত, দলের প্রবীণরা নবীনদের সুযোগ দিতে চান না। নবীনদের যেকোনো সিদ্ধান্ত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ছেঁটে ফেলতেন জেষ্ঠ্যরা। এমনকি কিছুদিন আগে হওয়া সভাপতি নির্বাচন নিয়েও এমন গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সভাপতি পদপ্রার্থী নবীন নেতাদের বিরুদ্ধে একজোট ছিলেন প্রবীণরা। রাহুলের পদত্যাগের ঘোষণার পর দলের সভাপতি পদের দৌড়ে ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, শচীন পাইলটের মতো নবীন মুখ। কিন্তু দলীয় সূত্র মতে, আহমেদ প্যাটেল-অশোক গেহলট, দিগ্বিজয় সিং, কমল নাথেরা সেটি ভেস্তে দিয়েছেন। ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিং যতই নবীনদের সুযোগ দেয়ার কথা বলুন, দিগ্বিজয়-কমল নাথের চাপেই তাকে মধ্যপ্রদেশের রাজনীতির বাইরে রাখছেন সোনিয়া, ঘনিষ্ঠ মহলে এই অভিযোগ করেছেন জ্যোতিরাদিত্য। দলীয় নেতৃত্বকেও নিজের অসন্তোষ জানিয়েছেন। আবার রাজস্থানে সম্প্রতি বিএসপির বিধায়কদের কংগ্রেসে এনে দলে নিজের গুরুত্ব বাড়িয়ে নিয়েছেন গেহলট। এবার পাইলটের ডানা ছাঁটার চেষ্টায় রয়েছেন তারা। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির এক নবীন নেতা বলেন, 'দলে নবীন নেতাদের সমস্যা হলো, তারা রাহুলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু রাহুল নিজেই প্রবীণদের চালের কাছে হেরে গিয়ে পিছু হটেছেন। ফলে দলে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে তার লড়াইও থেমে গেছে। আর দীর্ঘদিন রাজনীতির সুবাদে প্রবীণদের জোট যতটা মজবুত, নবীনদের তেমনটা নেই। ফলে কখনো ত্রিপুরায় প্রদ্যোত মাণিক্য দেববর্মন প্রকাশ্যে কান্নাকাটি করে পদত্যাগ করছেন, কখনো মহারাষ্ট্রে মিলিন্দ দেওরা দলের চেয়ে দেশের স্বার্থ আগে বলে নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করছেন। আবার শশী থারুর-জয়রাম রমেশরা একতরফা মোদি-নিন্দা না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে সবাই ছন্নছাড়া! এদিকে, সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন তাও দেড় মাস হলো। কিন্তু কংগ্রেসের ভেতরে এখন প্রচলিত কথা হলো, ম্যাডাম ফেরার পরই 'ভাই'র দাপট ফের বেড়েছে। এই ভাই আসলে সোনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ প্যাটেল। রাহুল সভাপতি থাকার সময় যাকে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু রাহুলের আমলে আহমেদ প্যাটেলসহ অন্য প্রবীণ নেতারা তেমন গুরুত্ব পেতেন না। নবীন নেতৃত্বকে পাশে সরিয়ে তারাই এখন ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে। বলা যায়, প্রবীণদের কব্জায় এখন কংগ্রেস। কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, 'রাহুলের পদত্যাগের পর গান্ধী পরিবারেরই কাউকে ক্ষমতার কেন্দ্রে দরকার ছিল। সোনিয়া অন্তর্র্বর্তী সভাপতি হতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু আমরা তাকে সহজে ছাড়ছি না।' সভাপতি হিসেবে সোনিয়াকে আনার জন্য টুইটারেও আলোচনা চলছে। কিন্তু এসবই হতাশা বাড়াচ্ছে কংগ্রেসের নবীন নেতাদের। রাহুল সভাপতি হওয়ার পর যারা কংগ্রেসে পরিবর্তনের আশা করছিলেন। সামনে হরিয়ানায় ভোট। সেটি লক্ষ্য রেখেই রাহুল সেখানে সভাপতি করেছিলেন অশোক তানওয়ারকে। অথচ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ভূপেন্দ্র সিং হুডার চাপে সোনিয়া তাকে সরাতে বাধ্য হন। শুক্রবার দিলিস্নতে হরিয়ানা নিয়ে বৈঠকে যোগ দেননি তানওয়ার। প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমার মুখ হয়তো দলের অনেকের পছন্দ হয় না। নেতৃত্ব সব জানেন। তারপরে যা ভালো বুঝবেন, করবেন।'