জাতিসংঘে ভাষণ

বিশ্বকে কঠোর হুশিয়ারি ইমরানের

পাকিস্তানকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলছে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র ম ভারত ইমরানের বক্তব্যকে উসকানিমূলক বলেছে

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাতিসংঘে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া ভাষণে শুক্রবার কাশ্মীর নিয়ে বিশ্বকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন ইমরান খান। কাশ্মীরে ভারতের 'আগ্রাসন' নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন তিনি। এছাড়া, দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যেকোনো যুদ্ধ বা সংঘাতের নেতিবাচক পরিণতি যে বিশ্বকেও ভোগ করতে হবে, তাও ইমরান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এনডিটিভি ভারত সরকার গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ওই অঞ্চলকে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে রেখেছে। কাশ্মীর অঞ্চলে গণহারে ধরপাকড়, যোগাযোগ বন্ধ করে রাখা এবং কারফিউ জারি করে ভারত বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা নেয়ায় উত্তেজনা বেড়েছে। পরবর্তী সময়ে সেখানে কিছু কড়াকড়ি শিথিল হলেও আটক বিশিষ্ট কাশ্মীরি নেতারা এখনো ছাড়া পাননি এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবাও পুরোপুরি চালু হয়নি। কাশ্মীরের এ পরিস্থিতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরে কিছু করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাগাদা দেন ইমরান। জাতিসংঘে আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বলেন, ৮০ লাখ কাশ্মীরিকে পাহারা দিয়ে রেখেছে ৯ লাখ ভারতীয় সেনা। কারফিউ উঠে গেলে কী হবে? কাশ্মীরিরা কি চুপচাপ তাদের মর্যাদার এই পরিবর্তন মেনে নেবে? মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। আর সেনারা কী করবে? তারা তাদের দিকে গুলি ছুড়বে। এতে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। ফলে কাশ্মীরিরা আরও মৌলবাদের দিকে ঝুঁকবে। ইমরান বলেন, 'গত ৩০ বছরে প্রায় এক লাখ কাশ্মীরি মারা গেছে। কারণ তাদের আত্মপরিচয়ের অধিকার দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল। ১১ হাজার নারী ধর্ষিতা হয়েছে। আমার একথা ভুল হলে সর্বোত্তম কিছু ঘটার আশা করা যায়। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যও তৈরি থাকতে হবে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে? যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। আর পারমাণবিক অস্ত্রধর কোনো দেশ শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলে এর পরিণতি সীমান্তের গন্ডি পেরিয়ে যাবে। বিশ্বও এর ফল ভুগবে।' এদিকে, পাকিস্তানকে নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক খেলা নিয়েও কথা বলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখন শান্তি আনার শপথ করেছিলাম। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধ যুদ্ধে নামলাম এবং হাজার হাজার লোককে হারালাম। আমি যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ ১৯৮০ সালে পশ্চিমা অর্থায়নে আমরা সোভিয়েতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামি। মুজাহিদদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এবং তারা স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সোভিয়েত তাদেরকে বলেছিল সন্ত্রাসী, আর আমরা বলেছিলাম মুক্তিযোদ্ধা।' ইমরান বলেন, '১৯৮৯ সালে সোভিয়েত পিছু হটে, মার্কিনিরা সব গুটিয়ে চলে যায়। আমরা তাদের এখানে বিদেশি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে জিহাদ শিখিয়েছি এবং এখন সেই যুক্তরাষ্ট্রই আফগানিস্তান দখল করে রেখেছে, আমাদের সম্ভবত তাদেরকে বলতে হয়, এটা এখন আর জিহাদ নয়।' সেই যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে উলেস্নখ করে ইমরান বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এখন আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান ছিল, আল-কায়েদা ছিল; পাকিস্তানের এর সঙ্গে লেনাদেনা কী? আমরা যখন ক্ষমতায় এলাম, তখন অতীতের সব কিছু বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি জানি, ভারত অভিযোগ করবে, এই গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানে ছিল। আমি জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের স্বচক্ষে দেখার জন্য স্বাগত জানাচ্ছি।' পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়নি অভিযোগ করে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের এখন আফগানিস্তান, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে এবং আমরা এরপর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে চাইলাম। তবে দেশটির 'উগ্র জাতীয়তাবাদী' শাসক দল পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায়নি।' ভাষণ উসকানিমূলক : তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারতের এদিকে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষণকে উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করেছে ভারত। তার ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম সচিব বিদিশা মৈত্র বলেন, 'ইমরান খানের ভাষণ মিথ্যায় ভরপুর ছিল। পাকিস্তান জাতিসংঘের এই মঞ্চের অপব্যবহার করেছে।' তিনি আরও বলেন, 'পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ এবং তাদের যথেষ্ট অত্যাচার সহ্য করতে হয়। ১৯৪৭ সালের তুলনায় আজ পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের পরিমাণ কয়েক শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে মদদ দেয়। তারা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছে।'