অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন

চীনকে ঝাঁকুনি দেয়ার শক্তি কারও নেই

কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মঙ্গলবার তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে ভাষণ দেন শি জিনপিং
যাযাদি ডেস্ক ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট শাসন বা 'গণচীন' (পিপলস রিপাবলিক অব চায়না-পিআরসি) প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে চীন। কমিউনিস্ট পার্টি রক্তাক্ত একটি গৃহযুদ্ধে জয় পাওয়ার পর ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও জে দং বা চেয়ারম্যান মাও গণচীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে অদম্য গতিতে আধুনিক চীনের উন্নয়ন ঘটে। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র হলেও দেশটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রণমূলক রাষ্ট্র হিসেবেই পরিচিত। সংবাদসূত্র : বিবিসি, সিনহুয়া গণচীনের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মঙ্গলবার রাজধানী বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থল তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন উদ্বোধনী ভাষণে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, 'দুনিয়ায় এমন কোনো শক্তি নেই, যা এই মহান জাতিকে ঝাঁকুনি দিতে পারে। এ দেশের মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম। ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে চীনা জাতি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। সুতরাং এ জাতির অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।' যে জায়গায় দাঁড়িয়ে মাও গণচীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঠিক সেই জায়গায় মাওয়ের মতো সু্যট পরে শি জিনপিং বক্তব্য রাখেন। দেশটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই মাও সু্যট পরেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিনপিং বলেন, 'এই মহান জাতির ভিত্তি কাঁপিয়ে দেয়ার মতো কোনো শক্তি দুনিয়ায় নেই।' তিনি আরও বলেন, 'চীনের বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এবং এ ভূখন্ডের দেশপ্রেমিক মানুষ পুরো দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। চীনের উন্নয়নে সমর্থন জোগানো সব বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।' ভাষণে 'শান্তিপূর্ণ' অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করেন শি জিনপিং। প্রেসিডেন্ট জিনপিং ছাড়াও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রায় ১০০টি দেশের সামরিক অ্যাটাশেকে। চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বেইজিং 'পেশিশক্তি' প্রদর্শন করছে না। এর প্রয়োজনীয়তাও দেখছে না তারা। বরং এর মাধ্যমে শান্তিকামী ও দায়বদ্ধ চীনকে উপস্থাপন করছে বেইজিং। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ৫৯টি পৃথক বিভাগের ১৫ হাজার সদস্য কুচকাওয়াজে অংশ নেয়; ৫৮০টি সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন এবং ১৬০টি এয়ারক্রাফট আকাশে ওড়ে। ৭০ বছর পূর্তির সামরিক মহড়ায় একটি অত্যাধুনিক হাইপারসনিক পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে চীন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা, করছেন, মঙ্গলবার প্রদর্শিত এই নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। কারণ এই ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে দ্রম্নতগতির হওয়ায় তা শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ ও মনুষ্যবিহীন যন্ত্রের সক্ষমতার এ প্রদর্শনী নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী 'পিপলস লিবারেশন আর্মি' (পিএলএ) খুবই আগ্রহী। এতে সড়কে সহজে পরিবহনযোগ্য ডিএফ-৪১ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অত্যাধুনিক সংস্করণটি প্রথমবারের মতো প্রদর্শনের উদ্যোগ নেয়া হয়। চীনা সমরাস্ত্র বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, এ মারণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো জায়গায় এবং একই সময়ে ১০টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে 'ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ'র এশিয়া প্যাসিফিক নিরাপত্তা বিষয়ক 'শাংরি-লা ডায়লগ'র জ্যেষ্ঠ ফেলো আলেক্সান্ডার নেইল বলেন, কুচকাওয়াজে অত্যাধুনিক অনেক মারণাস্ত্র প্রদর্শন করতে পারলেও চীন এখনো সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কয়েক দশক পিছিয়ে আছে। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তারা একটি 'শক্তিশালী সামরিক বাহিনী' তৈরি করছে, যা একইসঙ্গে বিশ্বের প্রধান সামরিক বাহিনীগুলোর সক্ষমতার সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমিয়ে আনবে।