বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ প্রকাশ

বৈঠকের ঘোষণা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল উত্তর কোরিয়া

ম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে কঠিন দর কষাকষি করতেই এমন পদক্ষেপ ম আগামী শুক্রবার থেকে দুই দেশের পরমাণু আলোচনা আবার শুরু করার কথা রয়েছে

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কাংওন প্রদেশের ওনসান বন্দরের কাছে বুধবার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। যা ৪৫০ কিলোমিটার দূরত্বে গিয়ে জাপান সাগরে পড়েছে। অদূরে দাঁড়িয়ে তাই দেখছেন দেশটির নেতা কিম জং উন -ফাইল ছবি
উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূল থেকে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়েছে, যেটা ডুবোজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার ধারণা। পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফের আলোচনা শুরু করার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর বুধবার এই পরীক্ষা চালালো উত্তর কোরিয়া। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি সর্বোচ্চ ৯১০ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ে। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার উন্নয়ন ঘটাতে বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করছে উত্তর কোরিয়া। পূর্ব উপকূলে উত্তর কোরিয়ার অন্যতম সামরিক ঘাঁটি ওনসানের আশপাশ থেকে সাগরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয় বলে জানিয়েছে দক্ষিণের সামরিক বাহিনী। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রটি ডুবোজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হতে পারে। সিউলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ নিয়ে 'উদ্বেগ' প্রকাশ করেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের নিন্দা জানিয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে গিয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এটা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ঘোষণার লঙ্ঘন। জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা জানিয়েছেন, সম্ভবত কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে এবং দ্বিতীয়টি স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২৭ মিনিটে জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চলে গিয়ে পড়ে। মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়া জানায়, আগামী শুক্রবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা আবার শুরু করবে। গত জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সাক্ষাতের পর এই প্রথম দু'দেশের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া নিজের সামরিক শক্তির জানান দিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসন্ন আলোচনায় কঠিন দর কষাকষি করতে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে পিয়ংইয়ং এ কথাও জানিয়ে রাখতে চায়, সংলাপে তার দাবি পূরণ করা না হলে উত্তেজনার মাত্রা তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে। গত ফেব্রম্নয়ারিতে হ্যানয়ে ট্রাম্প-কিম বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে সব পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগের কথা বললে পিয়ংইয়ং মার্কিন নেতৃত্বাধীন সব আন্তর্জাতিক অবরোধ তুলে নেয়ার দাবি করে। দুই পক্ষ পারস্পরিক সম্মতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় ভেস্তে যায় আলোচনা। হ্যানয়ের বৈঠক ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর গত ৩০ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে ওয়ার্কিং লেভেলে আলোচনা পুনরায় শুরুর বিষয়ে সম্মত হন উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন। তবে এখনও সেই আলোচনা শুরু হয়নি। এর আগে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে উত্তর কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'অর্থবহ আলোচনায়' বসার আহ্বান জানিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দেশগুলো জানিয়েছে, পিয়ংইয়ং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ না করলে তাদের ওপর জোরপূর্বক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। এদিকে, নির্বাচনী সমাবেশের জন্য হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বুধবার বলেন, 'উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় আমার কোনো সমস্যা নেই। কী ঘটছে আমরা তা দেখবো। তবে স্বল্পপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র অনেক ভালো।' ট্রাম্প বলেন, 'এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আমাদের চুক্তি হয়নি। আমাদের কথা হয়েছে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে। মনে হচ্ছে, সবই আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।' জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো নিষিদ্ধ। পিয়ংইয়ংয়ের এমন কর্মকান্ডে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে জোরালো নিন্দা জানানো হলেও এ ব্যাপারে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে তুলনামূলকভাবে কম প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করা হয়। ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে তিনবার বৈঠক করেন। আর তার এসব আলোচনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরে। গত বছর পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ এবং আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা না চালানোর ঘোষণা দেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয় একটি পারমাণবিক স্থাপনা।