মুখোশ নিষিদ্ধের প্রতিবাদ

নতুন করে বিক্ষোভ হংকংয়ে

বিক্ষোভকারীরা দ্রম্নত ঘরে না ফিরলে অভিযানে নামবে পুলিশ

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক চার মাসের টানা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে ঔপনিবেশিক যুগের জরুরি আইনের আওতায় হংকংয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশে মুখোশ পরা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে রোববার নতুন করে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। নতুন আইন অমান্য করে এদিন মুখোশ পরেই তারা হংকংয়ের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভ করেছে। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তারা কয়েকটি স্থান থেকে সমন্বিতভাবে পদযাত্রা শুরু করে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস আর বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বিক্ষোভকারীরা এদিন বিক্ষোভ চালিয়ে গেছে। আর তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ছুড়েছে কাঁদানে গ্যাস। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি হংকংয়ের চীনপন্থি নেতা ক্যারি লাম শুক্রবার মুখোশ নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়ার পরপরই এর প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় ছোটখাটো বিক্ষোভ হয়েছিল। শনিবার সেই বিক্ষোভে শামিল হয় আরও বেশি মানুষ। রোববার তা বড় আকার ধারণ করে। রোববারের বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়া নীল মুখোশধারী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, 'মুখোশবিরোধী ওই আইন কেবল আমাদের ক্ষোভই বাড়িয়েছে। আরও অনেক মানুষ এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে। আমরা নতুন আইনকে ভয় পাই না। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের অধিকারের জন্য লড়ব। আমি মুখোশ পরেছি সরকারকে এ বার্তাই দিতে যে, তাদের দমনপীড়নকে ভয় করি না।' হংকং পুলিশের ভাষ্য, বিক্ষোভকারীরা বেআইনিভাবে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। ফলে তারা দ্রম্নতই ঘরে না ফিরলে তাদের ছত্রভঙ্গ করার অভিযান শিগগিরই চালানো হবে। হংকংয়ের নেতা লামও শনিবার আর কোনো সহিংসতা না হতে দেয়ার অঙ্গীকার করে বলেছিলেন, 'আমরা আর দাঙ্গা-বিক্ষোভকারীদের আমাদের প্রিয় হংকংকে ধ্বংস করতে দিতে পারি না।' হংকংয়ের জননিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া বিক্ষোভকারীদের 'চরম সহিংসতা'র প্রেক্ষাপটেই মুখোশবিরোধী আইন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। নতুন আইনের আওতায় মুখ ঢেকে রাখার জন্য বিক্ষোভকারীদের এক বছরের জেল হতে পারে। হংকংয়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে এবং তাদের যেন শনাক্ত করা না যায়, এজন্য প্রায়ই মুখোশ পরে। এর আগে শনিবার বিক্ষোভকারীদের ভাঙচুরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া হংকংয়ের বিভিন্ন মেট্রোস্টেশন সংস্কারের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। যে কারণে নগরীর বেশিরভাগ মেট্রোসেবা ও অন্য পরিবহণ পরিষেবা ব্যাহত ছিল। পরিবহণ ব্যবস্থা অচল থাকায় পুরো হংকং শনিবার 'ভূতুড়ে' নগরীতে পরিণত হয়। তবে গণমাধ্যমের মতে, বিক্ষোভ ঠেকাতেই ক্যারি লামের সরকার নতুন এই ফন্দি এঁটেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুখোশ নিষিদ্ধের নতুন আইনটি খুবই বিতর্কিত এবং এটি কার্যকর করাও কঠিন হবে। এছাড়া, হংকংয়ে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে এটিই সম্ভবত প্রথম এমন কড়া পদক্ষেপ বলে সতর্ক করেছেন সমালোচকরাও। তাদের আশঙ্কা, এতে হংকংয়ে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা বিপদগ্রস্ত হবে। গণতন্ত্রপন্থি এক আইনজীবী বলেছেন, 'এটি কেবল মাত্র শুরু। সামনে আইনের নামে আরও অনেক কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আন্দোলনকারীদের কোণঠাসা করা হতে পারে বলে আমি উদ্বিগ্ন।' কেবল বিক্ষোভকারীরাই নয়, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন মহল থেকেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিকর্ যাব বলেছেন, 'হংকং পরিস্থিতি কেবলমাত্র রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই সমাধান করা যেতে পারে।' চীনের মূল ভূখন্ডে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে একটি প্রস্তাবিত বিল বাতিলের দাবিতে গত জুন মাসে হংকংয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। টানা আন্দোলনের মুখে ওই বিল প্রথমে 'মৃত' এবং পরে বাতিল ঘোষণা করা হলেও আন্দোলন থামেনি। বরং গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা এখন হংকংয়ের চীনপন্থি সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।