তুরস্কের অভিযান

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

কুর্দিদের সমর্থনের বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে ওয়াশিংটন সঙ্কেত ছাড়াই যে কোনো রাতে আসতে পারি :এরদোয়ান

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান
সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান চালানোর ঘোষণার পর নিজেদের সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব স্টেফানি গ্রিশাম এক বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে এই অভিযানে সহায়তা করবে না এবং সেখানে অবস্থানও করবে না।' সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতেই তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঙ্কারা। সোমবার এমন মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাধা না দিলে সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য তুরস্কের সেনাবাহিনী প্রস্তুত। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ঘোষণা দেয়, এই অভিযানের সামনে তারা দাঁড়াবে না, তাহলে তুর্কি সেনাবাহিনী অভিযান চালাবে। সোমবার এরদোয়ান সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়ে এমন মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'একটি বাক্য রয়েছে, যেটি আমরা সব সময় বলি- 'আমরা সঙ্কেত দেয়া ছাড়াই যে কোনো রাতে আসতে পারি।' এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রও তুর্কি অভিযানের সম্ভাব্যতার কথা জানিয়েছিল। আর চূড়ান্ত ঘোষণা আসার পর সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছে তারা। তবে মার্কিন সেনারা সিরিয়ায় অবস্থান করা এক হাজার সেনাকেই প্রত্যাহার করে নেবে, নাকি শুধু উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলো থেকে সরে আসবে, সেটা এখনো স্পষ্ট করে জানা যায়নি। এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তেল আবিয়াদ ও রাস আল-আইনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। অন্যান্য অঞ্চলের সেনারা এখনো তাদের অবস্থানেই রয়েছে। সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন রয়েছে। তারা আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সিরিয়ার বাশার-বিরোধী বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাজ করছে। সোমবার সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মুখপাত্র কালিন বলেন, সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতেই তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঙ্কারা। টুইটারে এক বিবৃতিতে এরদোয়ানের মুখপাত্র কালিন বলেন, সিরিয়ার অখন্ডতার কাঠামোর মধ্যেই তারা এই 'নিরাপদ এলাকা' প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন। নিরাপদ এলাকার দুটি উদ্দেশ্য। এক. সন্ত্রাসী উপাদানগুলোকে দূরে সরিয়ে সীমান্তকে নিরাপদ রাখা এবং শরণার্থীদের নিরাপদে সিরিয়ায় পুনর্বাসনের পথ করে দেয়া। আঙ্কারা বলছে, তারা ইউফ্রেতিসের ওই পূর্ব অংশে ২০ লাখ সিরীয় শরণার্থীর পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে চায়। উলেস্নখ্য, তুরস্ক ৮ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৩৬ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ওয়াশিংটন এর আগে কুর্দি গেরিলা দল ওয়াইপিজির বিরুদ্ধে তুরস্কের যে কোনো অভিযানের ব্যাপারে আঙ্কারাকে হুশিয়ার করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তারা যে তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে, এরদোয়ানকে অভিযান চালানোর পথ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে তারই ইঙ্গিত মিলল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরেই সিরিয়ার কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের হুমকি দিয়ে আসছিল। এই গেরিলারা তুরস্কে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ আঙ্কারার। সিরিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করার পেছনে ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের বড় ধরনের ভূমিকা আছে। আইএসবিরোধী ওই লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ কুর্দি গেরিলাদের প্রশিক্ষণ ও সামরিক সহায়তা দিয়েছিল। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে বিবৃতি আসার পর অঞ্চলটির যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কেননা, এতে কুর্দিদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। দীর্ঘদিন থেকেই অঞ্চলটিতে এই বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযানে মার্কিন বাহিনীর কোনো সমর্থন বা সম্পৃক্ততা থাকবে না। ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদস্যরা অবস্থান করবে না। স্টিফেন গ্রিশাম বলেন, আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে বন্দি বিদেশি যোদ্ধাদের নিজেদের হেফাজতে নেবে তুরস্ক।