সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান

সীমা ছাড়ালে ধ্বংসের হুমকি ট্রাম্পের

সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে বিরোধী দল ছাড়াও নিজ দলেও তোপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিরীয় শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ এলাকা গড়ে তুলতেই এ অভিযান মন্তব্য এরদোয়ানের

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় অভিযানের নামে তুরস্ক 'সীমার বাইরে' কিছু করলে তাদের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার একের পর এক টুইট বার্তায় তিনি সিরিয়ার ওই এলাকা থেকে মার্কিন বাহিনী সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষেও যুক্তি দিয়েছেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ফলে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দি যোদ্ধারা আঙ্কারার সাঁড়াশি আক্রমণের শিকার হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটবিরোধী লড়াইয়ের মিত্র কুর্দিদের পাশ থেকে সরে এসে এভাবে তাদের ওপর আক্রমণের পথ করে দেয়ায় ট্রাম্প প্রভাবশালী রিপাবলিকানদেরও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সিদ্ধান্ত বদলাতেও অনুরোধ জানিয়েছেন। সিরিয়াজুড়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের যে হাজারখানেক সেনা রয়েছে, এর মধ্যে তুরস্কের সীমান্ত এলাকা থেকে মাত্র দুই ডজন সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। কুর্দি নেতৃত্বাধীন সংগঠন সিরিয়ান ডেমোক্রেটক ফোর্স-এসডিএফ যুক্তরাষ্ট্রের এই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে 'পেছন থেকে ছুরি মারা' হিসেবে অভিহিত করেছে। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের ফলে ওই অঞ্চলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পুনরুত্থান ঘটতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। সিরিয়ার কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলাদের তুরস্ক তাদের দেশে নিষিদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সহযোগী মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিরীয় সীমান্তে 'অভিযানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে' বলে টুইটারে জানায়। ট্রাম্প পরে সতর্ক করে বলেন, 'সীমার বাইরে' কিছু করলে তিনি তুরস্কের অর্থনীতি 'পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন' করে দেবেন। যদিও ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, 'তিনি এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি চান না। এই শেষহীন যুদ্ধ থেকে মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই, আমরা যুদ্ধে অংশ নেব না।' ন্যাটো সদস্যভুক্ত এই দুই দেশ একসময় একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে বিভিন্ন ইসু্যতে টানাপড়েন দেখা যাচ্ছে। কূটনৈতিক ওই টানাপড়েনের সূত্র ধরে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল অনেক কর্মকর্তার ওপর। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান সোমবার বলেন, কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তার অভিযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সীমান্তে ২০ লাখ সিরীয় শরণার্থীর জন্য একটি 'নিরাপদ এলাকা' প্রতিষ্ঠা। ৮ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া ৩৬ লাখের বেশি শরণার্থী এখন তুরস্কে অবস্থান করছে বলে ধারণা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার। পেন্টাগনের মুখপাত্র জনাথন হফম্যানও সিরিয়ায় অভিযানের ব্যাপারে আঙ্কারাকে সোমবার সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, 'উত্তর সিরিয়ায় তুর্কি অভিযানকে যে আমরা সমর্থন করছি না, প্রেসিডেন্টের মতো মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও সেটা সুস্পষ্ট ভাষায় জানাতে চায়।' মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেলও উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কড়া সমালোচনা করেছেন। এভাবে সেনা সরিয়ে নেয়ার ফলে রাশিয়া, ইরান ও বাশার আল-আসাদের লাভ হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী রিপাবলিকান লিন্ডসে গ্রাহামও প্রেসিডেন্টের সেনা সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্পকে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য করতে সিনেটে প্রস্তাব আনবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি কুর্দিদের এভাবে 'মৃতু্যর মুখে ছেড়ে আসাকে ভুল' হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি প্রেসিডেন্টকে তার এই 'বিপদজনক সিদ্ধান্ত' বদলাতে অনুরোধ করেছেন। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের ৫০-১০০টি এলাকা থেকে রোববার মার্কিন বাহিনী সরিয়ে নেয়া হয়েছে, সেখানে তারা তুরস্কের সামরিক বাহিনী এবং কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের মধ্যবর্তী বাফার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। কিন্তু হঠাৎ করে ট্রাম্প ওই এলাকা থেকে মার্কিন বাহিনী সরিয়ে নেয়ার ঘোষণার পর আঙ্কারা সেখানে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়। তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরেই সিরিয়ার কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের হুমকি দিয়ে আসছিল। এই গেরিলারা তুরস্কে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ আঙ্কারার।