উইঘুর নিপীড়ন

যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় চীনের ২৮ প্রতিষ্ঠান

মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় চীন এখনো কোনো মন্তব্য করেনি চীনে ১০ লাখ উইঘুর অন্তরী জুলাইয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রকাশ

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের অভিযোগে দেশটির সরকারি-বেসরকারি ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে চীনের ওই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে ওয়াশিংটনের অনুমোদন ছাড়া কোনো মার্কিন কোম্পানির পণ্য কিনতে পারবে না। সোমবার মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান তাদের নথিতে কালো তালিকায় নেয়া এ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো 'মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নে জড়িত' বলে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, এই ২৮টি প্রতিষ্ঠান চীনের দমন অভিযান, নির্বিচারে আটক এবং উইঘুর, কাজাখসহ দেশটির অন্যান্য মুসলমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নজরদারিতে জড়িত। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জিনজিয়াং প্রদেশের জননিরাপত্তা বু্যরোসহ মোট ২০টি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হিকভিশন, দাহুয়া টেকনোলজি, মেগভিল টেকনোলজিসহ বাকি ৮টি প্রতিষ্ঠানের সবগুলোই 'ফেসিয়াল-রিকগনিশন' প্রযুক্তিতে বিশ্বসেরা। এর মধ্যে হিকভিশন বিশ্বের অন্যতম বড় নজরদারি সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় চীন এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। জিনজিয়াংয়ের বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে বেইজিং মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ উইঘুরদের ওপর তীব্র নিপীড়ন চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে। তবে চীন শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে ওঠা এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, আটক কেন্দ্র নয়, ওই 'স্বেচ্ছা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো' করা হয়েছে উগ্রবাদ মোকাবেলায়। তিব্বতের মতো জিনজিয়াংও স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ। এখানকার অধিবাসীদের ৪৫ শতাংশই উইঘুর সম্প্রদায়ের, নৃতাত্ত্বিকভাবে যারা টার্কিশ মুসলমান। প্রদেশটির ৪০ শতাংশ অধিবাসী হান। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এবারই প্রথম চীনের কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, চলতি বছরের মে মাসে ওয়াশিংটন চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়েকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছিল। এ ছাড়া 'ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস' অভিযোগ করেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই উইঘুরদের আটক করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের কমিউনিস্ট স্স্নোগান দিতে বাধ্য করা হয়। তাদের ঠিকভাবে খাবার দেয়া হয় না। শারীরিক নির্যাতনও করা হয়। জুলাইয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ২০টির বেশি দেশ উইঘুর ও অন্যান্য মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর চীনের নিপীড়নের সমালোচনা করে লেখা একটি যৌথ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিল। সে সময় মানবাধিকার কমিটি জানিয়েছিল, চীন ১০ লাখ উইঘুর মুসলমানকে 'কাউন্টার-এক্সট্রিমিজম সেন্টারগুলোয়' আটকে রেখেছে। জেনেভায় জাতিসংঘের জাতিগত বৈষম্য নির্মূল কমিটির সদস্য গে ম্যাকডওগাল চীনের ওপর জাতিসংঘের বৈঠকে এ দাবি করেছিলেন। বৈঠকে তিনি আরও বলেছিলেন, 'এত বিপুলসংখ্যক উইঘুর আটকের ঘটনা উদ্বেগজনক। উইঘুরের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে বেইজিং এমন অবস্থা করেছে যে, সেটাকে 'অন্তরীণ' করে রাখার মতো বলা যায়।' উলেস্নখ্য, চীনের পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত স্বর্ণ, তেল ও গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা উইঘুর সুন্নি মুসলমান। তারা চীনা নয়, তুর্কি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত উইঘুর ভাষায় কথা বলেন।