নিউ ইয়র্কারে সাক্ষাৎকার

ভারতকে বোঝার মতো দূরদৃষ্টি মোদির নেই :অমর্ত্য সেন

'গুজরাট দাঙ্গার মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করা মোদির বড় সাফল্য'

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন
ভারতের বর্তমান গণতন্ত্রের সংকট ও ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। মার্কিন দৈনিক 'দ্য নিউ ইয়র্কার'কে সোমবার দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ সরাসরি নিশানা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস অমর্ত্য সেন বলেন, 'জন স্টুয়ার্ট মিলের কাছ থেকে বড় যে বিষয়টি আমরা জেনেছি তা হলো, গণতন্ত্র মানে আলোচনার ভিত্তিতে চলা সরকার। ভোটের হিসাবে যেভাবেই হোক, আলোচনাকে ভয়ের বস্তু করে তুললে গণতন্ত্র থাকে না।' তার আক্ষেপ, ভারতে এখন একাট্টা কট্টর হিন্দুত্বের দাপট চলছে। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, 'বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতকে বোঝার মতো মনের প্রসারতা বা দূরদৃষ্টি নেই মোদির।' মোদির সবচেয়ে বড় সাফল্য কী? অমর্ত্যের মতে, 'গুজরাট দাঙ্গার মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করা। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ খুন হয়েছিলেন, তার পেছনে মোদির একটা ভূমিকা ছিল। কিন্তু এই মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় ভারতে অনেকেই এখন বিশ্বাস করেন যে, গুজরাট দাঙ্গায় মোদির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।' গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম প্রসঙ্গে অমর্ত্যের খেদ, 'সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদ মাধ্যম। ফলে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সংবাদ চ্যানেল পাওয়া দুষ্কর।' স্টুয়ার্ট মিলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'মানুষ ভয়ে আছেন। এটা আগে কখনো দেখিনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কী চায়, সেটা বোঝারও পথ নয় এটা।' তবু পুরোপুরি হতাশ নন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, 'সবকিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এখনো সাহসী কয়েকটি সংবাদপত্র আছে, যারা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ছাপতে ভয় পায় না। দুই-একটা টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনও আছে। প্রকাশ্য সভাও হচ্ছে কিছু। ভারতের কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। বেশ কটি রাজ্যে বিজেপিই একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়।' সাক্ষাৎকারে দুঃসময়ের প্রসঙ্গে ভিড় করেছে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি। অমর্ত্য সেনের কথায়, 'ছেলেবেলায়ও খুব খারাপ সময় দেখেছি। দেখেছি কীভাবে আমার আত্মীয়দের জেলে আটকে রাখা হয়েছে। ৯ বছর বয়সে দেখেছি মন্বন্তর। তিন লাখ মানুষ মারা যায়। হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা দেখেছি। মুসলমান জনমজুরকে কুপিয়ে খুন করেছে আমারই পাড়ার কিছু হিন্দু। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'আমি তখন দশ কি এগারো বছরের শিশু। বাগানে খেলছিলাম। দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে আসছেন একজন। চিৎকার করে বাবাকে ডাকলাম। পানি খেতে দিলাম। এত রক্ত কখনো দেখিনি। আমার কোলে মাথা, স্পষ্ট বলেছিলেন, বিবি বলেছিল, হিন্দু এলাকায় কাজ করো না। কিন্তু বাচ্চারা না খেয়ে আছে। কিছু তো রোজগার করতেই হবে।' তিনি আরও বলেন, 'আবার অনেক বড় বড় সমস্যা মিটে যেতেও দেখেছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে, আমি নিশ্চিত।' কোনো কিছু সম্পর্কেই আমি নিশ্চিত নই। এর অর্থ এটাও নয় যে, হতাশার পরিস্থিতিতে সব আশা ছেড়ে দিতে হবে।'