অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীর দাবি

মৃতু্যর পরও সচল থাকে মানবদেহ!

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মৃতু্যর পর মরদেহে কী রকম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে বা আদৌ ঘটে কিনা, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার এক বিজ্ঞানীর দাবি, মৃতু্যর পর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সচল থাকে মানবদেহ। মৃতদেহ মাংসপিন্ডে রূপান্তরিত হওয়ায় এবং লিগামেন্টগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটে বলে তিনি জানান। দীর্ঘ ১৭ মাস একটি মরদেহের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অ্যালিসন উইলসন নামের এক বিজ্ঞানী এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তার এই গবেষণা বিশ্বের সব গোয়েন্দা ও প্যাথলজিস্টদের জন্য বিশেষ সহায়ক হতে পারে বলে দাবি করেছেন তিনি। তার এই গবেষণা মৃতু্যর প্রকৃত কারণ জানতে এবং গোয়েন্দাদের 'ক্রাইম সিন' সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে সাহায্য করবে বলেও জানান বিজ্ঞানী অ্যালিসন উইলসন। তার গবেষণাটি সম্প্রতি 'ফরেনসিক সায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল : সার্জারি' জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'গবেষণায় তিনি দেখেছেন, মানুষ মারা যাওয়ার পর আসলে নিষ্ক্রিয় থাকে না, যেটাকে বলা হয় চিরনিদ্রায় শায়িত। মরদেহটি পরীক্ষার জন্য প্রতি মাসে একবার করে অস্ট্রেলিয়ার কেয়ার্ন শহর থেকে সিডনি ছুটে গেছেন এই বিজ্ঞানী। এতে তার প্রতি ফ্লাইটে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা।' অস্ট্রেলিয়ার হেমিস্ফেয়ার শহরের দক্ষিণাঞ্চলে মরদেহের একটি ফার্ম রয়েছে, যেটি শহরটি থেকে অনেক দূরে গোপনীয় একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। তবে ময়নাতদন্ত-সম্পর্কিত গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিত ফার্মটি সরকারিভাবে 'দি অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাকাল্টি ফর ট্যাফোনমিক এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ' বা 'আফটার' নামেই বেশি পরিচিত। এখানে ৭০টি মরদেহ রাখা আছে। এগুলোর একটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানী অ্যালিসন। তিনি ও তার সহকর্মীদের গবেষণার বিষয় ছিল- টাইম ল্যাপস ক্যামেরা (বিরামহীন ক্যামেরা) ব্যবহার করে কোনো মৃতের মরে যাওয়ার প্রকৃত সময়টা বের করা এবং এ সময়টা মরদেহে কী রকম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা নেয়া। বিজ্ঞানী অ্যালিসন বলেন, 'মৃতু্যর পর মানবদেহে যে কার্য চলে, তা মূলত মানবদেহ পচনের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে মরদেহ মমি বা অন্য কোনোভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হলে সেখানে অঙ্গের সক্রিয়তা ভিন্ন হতে পারে।' অ্যালিসন আরও বলেন, মানুষের মৃতু্যর পর সবচেয়ে কাছে বা পাশে থাকে তার হাত। তবে কবরস্থ করার পর সেই হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে আরেক পাশে চলে যায়। আমরা যেটা পেয়েছি, সেটা হচ্ছে হাতগুলো উলেস্নখযোগ্যভাবে নড়াচড়া করে। এতে হাতগুলো এক পাশ থেকে সরে গিয়ে দেহের আরেক পাশে গিয়ে পঁচে যায়।' অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাসিলিটি ফর টাফোনোমিক এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চের উপ-পরিচালক ড. মাইকেন ইউল্যান্ড জানিয়েছেন, দেহ-গহ্বরে থাকা গ্যাসের পাশাপাশি পোকামাকড়ের কারণেও মৃত দেহাংশ সচল থাকতে পারে। এর আগে ২০১৮ সালে কানাডার একদল গবেষক দাবি করেছিলেন, মৃতু্যর পরও মানুষের মস্তিষ্ক সচল থাকে। তাদের দাবি অনুসারে, মানুষের মৃতু্যর পর অন্তত ১০ মিনিট পর্যন্ত মস্তিষ্ক কাজ করতে থাকে। কানাডার 'ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও'র একদল গবেষক বিষয়টি প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষণ করেছেন। গবেষকরা সে সময় জানান, চিকিৎসকরা হৃদস্পন্দন দেখেই রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু এরপরও কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই মৃত মানুষের মস্তিষ্ক ঠিকই কাজ করছে। গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্ক যেমন কাজ করে, ঠিক তেমনটাই করছিল। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) গবেষকরা দেখতে পান, এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরও তার মস্তিষ্ক অনেকক্ষণ ধরে সচল ছিল। এই গবেষণাপত্রটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। ওই গবেষণায় বলা হয়, রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন থেমে গেলেও মস্তিষ্ক তরঙ্গ চলতে থাকে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতি চারজনের একজন মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্ক সচল থাকতে দেখা গেছে। প্রতিটি মস্তিষ্ক আলাদাভাবে কাজ করতে থাকে। এতে মৃতু্যর পর কী হয়, সেটা নিয়ে আরও রহস্য তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ