তুরস্কের অভিযান

সিরিয়ায় তুর্কি-কুর্দি তুমুল লড়াই

ম অভিযান শুরুর পর ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ ম অভিযানকে সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র : ট্রাম্প

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
তুর্কি বাহিনীর বিমান হামলা
যাযাদি ডেস্ক কুর্দি নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অভিযানের দ্বিতীয় দিনে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান জোরালো করেছে তুরস্ক। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তু দখল করেছে। এ ছাড়া সীমান্তের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কুর্দি গেরিলাদের সঙ্গে তুর্কি বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। এতে সাত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এদিকে, তুর্কি অভিযান শুরুর পর বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে হাজার হাজার মানুষ। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স গত সোমবার সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় তুরস্ক। সে সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলেন, 'সন্ত্রাসী অস্তানা গুঁড়িয়ে দিতেই তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঙ্কারা। মধ্যপ্রাচ্যে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় তুরস্কের অভিযান শুরুর আগে সেখান থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তুর্কি অভিযানের দ্বিতীয় দিনে রাস আল-আইন ও তাল আবিয়াদ শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় তুমুল লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে একাধিক কুর্দি সূত্র। তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মিও এই লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। মূলত জনবিরল এই এলাকায় বসবাস করে আরব বংশোদ্ভূতরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আস আল-আইন শহরে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। সামরিক বিমান ওই এলাকায় টহল ও বোমাবর্ষণ করছে। 'অপারেশন পিস স্প্রিং' নামে তুর্কি অভিযানের প্রথম দিনে তুরস্কের বিমান ও কামান কুর্দিদের ১৮১টি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে আঙ্কারা। এসব হামলায় অন্তত পাঁচ বেসামরিকসহ ৮ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ)। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থল ও আকাশপথে তাদের অভিযান রাতভর সফলভাবে অব্যাহত রয়েছে। তাল আবিয়াবের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম তুরস্ক দখল করেছে। কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। ট্রাম্প মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নিয়ে মিত্রদের 'পেছন থেকে ছুরি মারায়' তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতারাও। এ ছাড়া তুরস্কের এ অভিযানে পশ্চিমা দেশগুলোও উদ্বেগ জানিয়েছে। পাঁচ ইউরোপীয় দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও পোলান্ডের অনুরোধে বৃহস্পতিবার এ অভিযান নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনাও হয়। শনিবার কায়রোতে জরুরি বৈঠক ডেকেছে আরব লিগও। অভিযানকে সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র : ট্রাম্প এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুর্কি অভিযানকে সঠিক সিদ্ধান্ত নয়, বাজে পরিকল্পনা বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।' বুধবার হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে মধ্যপ্রাচ্যের সীমাহীন যুদ্ধের বিপক্ষে ওয়াশিংটনের অবস্থান বলেও উলেস্নখ করা হয়। বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'বুধবার সকালে ন্যাটো সদস্য তুরস্ক সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের এ অভিযানকে সমর্থন করে না এবং বিষয়টি তুর্কি সরকারকে পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে যে, এই অভিযান একটি বাজে পরিকল্পনা।' হোয়াইট হাউসের ওই বিবৃতিতে ট্রাম্প আরও বলেন, 'রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করার প্রথম দিন থেকে আমি বলে আসছি যে, এই সীমাহীন ও জ্ঞানহীন বিশেষ করে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থ নেই সেই যুদ্ধ আমি করতে চাই না। আমরা আশা করি, তুরস্ক তার সব প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করবে এবং আমরা পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবো।' অভিযানে সবুজ সংকেত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র :পম্পেও অন্যদিকে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র 'সবুজ সংকেত' দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। বুধবার সম্প্রচারমাধ্যম 'পিবিএস'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সিরীয় সীমান্ত নিয়ে আঙ্কারার নিরাপত্তা উদ্বেগকে 'ন্যায্য' অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। পম্পেও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কুর্দি অধু্যষিত এলাকার মার্কিন সেনাদের বিপদের বাইরে রাখতেই তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।' ওয়াশিংটনের এ সিদ্ধান্তের পরপরই তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সর্বাত্মক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়।