ফের বেড়েছে তেলের দাম

ইরানি তেলের ট্যাংকারে দুই দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ম হামলার ঘটনায় ইরান ও সৌদির মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে ম রিয়াদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি ম হামলার নেপথ্যে সৌদি আরব?

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সৌদি আরবের জেদ্দা সমুদ্র বন্দরের কাছে উপসাগরীয় অঞ্চলে ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানির (এনআইওসি) একটি তেলের ট্যাংকারে দুইবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে দাবি ইরানের সংবাদ সংস্থা 'আইএসএনএ'। খবরে বলা হয়, শুক্রবারের ওই হামলায় ট্যাংকারটিতে আগুন ধরে সেটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স জেদ্দা বন্দর থেকে ৯৬ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রে থাকা হামলার শিকার ট্যাংকারটি ফুটো হয়ে সেটি থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ছে। এ ঘটনায় লোহিত সাগর এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আবারও তেলের ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় দুই প্রতিবেশী ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে উত্তেজনার পারদ আরও চড়বে। ওই এলাকায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর নৌবহর 'ফিফথ ফ্লিট' থেকে ইরানের এ দাবি সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে তারা আর কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি। সৌদি আরবের পক্ষ থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বেশ কিছুদিন ধরেই ভারত মহাসাগর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে সুয়েজ খালের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথ 'রেড সি শিপিং এরিয়ায়' উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত মে ও জুন মাসে উপসাগরীয় এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা এবং গত মাসে সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান একটি তেলক্ষেত্রে হামলার পর আবারও উপসাগরীয় এলাকায় তেলের ট্যাংকারে হামলার ঘটনা ঘটলো। এদিকে, সৌদি আরবের উপকূলে ইরানের তেলের ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম ফের বেড়েছে দুই শতাংশের বেশি। তেহরানের দাবি, ওই ট্যাংকারে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে। এই ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম দুই দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬০ দশমিক ৪৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অপরিশোধিত তেলের দাম দুই দশমিক এক শতাংশ বেড়ে ৫৪ দশমিক ৬৯ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাজার বিশ্লেষক স্টিফেন ইনস বলেন, 'বিকল্প সক্ষমতার অবস্থাও দুর্বল আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি তেল ক্ষেত্রের সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে দৃশ্যত উদ্বেগ রয়েছে, সে কারণে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঝুঁকিতে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করতে চাইছেন।' প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মধ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের দুই তেল স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলার পর সৌদি আরবের তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা হামলার দায় স্বীকার করলেও শুরু থেকেই এ ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে আসছে সৌদি আরব। যদিও তেহরান তা অস্বীকার করে আসছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয় রিয়াদ। কিন্তু দৃশ্যত রিয়াদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই নড়েচড়ে বসেন সৌদি যুবরাজ। ইরানের সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে পাকিস্তান ও ইরাকের শরণাপন্ন হন 'এমবিএস' নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রক্তপাত (ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন) থামালেই কেবল রিয়াদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এরই মধ্যে শুক্রবার সৌদি উপকূলে ইরানি ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো। হামলার নেপথ্যে সৌদি আরব? সৌদি আরবের বন্দর নগরী জেদ্দার সমুদ্র উপকূলে ইরানের তেলবাহী ট্যাংকারে শুক্রবার যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, তা করেছে সৌদি। এমনটা দাবি করেছে ইরানের সংবাদমাধ্যম। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা। ইরান বলেছে, একবার নয়, দুবার ট্যাংকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি 'আরামকো'র দুটি বৃহৎ স্থাপনায় হামলার পর সৌদি প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছিল। ইরানের তেলের ট্যাংকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশটির জাতীয় তেল কোম্পানি ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানির 'সাবিতি' ও শিনোপা নামের দুটি ট্যাংকারের। সাবিতি থেকে তেল চুইয়ে পড়তে শুরু করেছে লোহিত সাগরে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম বলছে, জেদ্দা থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে অপরিশোধিত তেলের এই ট্যাংকারে স্থানীয় সময় ভোর ৫টা নাগাদ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় হামলাটি হয় তার ২০ মিনিট পর। ইরানের সংবাদ সংস্থা 'ইরনা' জানিয়েছে, গত ১৪ আগস্ট সাবিতি ট্যাংকারটির সঙ্গে শেষবার যোগাযোগ হয়। আর গত বৃহস্পতিবারও শিনোপার গতিবিধি সম্পর্কে জেনেছিল ইরান।