সিরিয়ায় অভিযান

তুরস্কের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আঙ্কারার বিরুদ্ধে অবরোধের খসড়া তৈরির নির্দেশ ট্রাম্পের অভিযানে ঘরবাড়ি হারিয়েছে লক্ষাধিক মানুষ : জাতিসংঘ আইএসের গাড়িবোমা হামলা

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
তুর্কি অভিযানের মুখে পালাচ্ছে লোকজন
সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তুরস্কের চলমান অভিযান থামাতে যুক্তরাষ্ট্র চাপ বাড়াচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার 'মারাত্মক পরিণতি'র বিষয়ে সতর্ক করেছেন, আর অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন নতুন অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সরিয়ে নিলে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। পরে তিনি কুর্দি ও ন্যাটো মিত্র তুরস্কের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। তবে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান। গত সোমবার সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় তুরস্ক। এরপর ওই এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সরিয়ে নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে 'পিস স্প্রিং অপারেশন' শুরু করে আঙ্কারা। অভিযানের অংশ হিসেবে তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ইউফ্রেতিস নদীর পূর্ব দিকে প্রবেশ করে। তুর্কি অভিযানে সহযোগিতার জন্য তারা অগ্রসর হচ্ছে। পরে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় অভিযানে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান জোরালো করে তুরস্ক। এতে তিন শতাধিক 'জঙ্গি' নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আঙ্কারা। এদিকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান বলছেন, তিনি উত্তর সিরিয়া থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের বিতাড়িত করে একটি 'সেফ জোন' বা নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে সিরীয় শরণার্থীদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে চান। আর মধ্যপ্রাচ্যে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কুর্দি যোদ্ধারা। শুক্রবার সিরিয়ায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী তুরস্কের গোলাবর্ষণের শিকার হয়েছে বলে দাবি করার পর থেকে চলমান সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ব্রম্নক ডিওয়াল্ট বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির কথা জেনেও গোলাবর্ষণ করেছে তুরস্ক। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।' যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার জোর দিয়ে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র তাদের কুর্দি মিত্রদের ছেড়ে যায়নি।' আর হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, 'আঙ্কারা হামলা বন্ধ না করলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে।' তুর্কি প্রেসিডেন্ট আবেগি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'এই অভিযানের কারণে আইএস বন্দিদের কারাগারগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে।' অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন বলেন, 'তুরস্কের বিরুদ্ধে নতুন অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের খসড়া তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই নির্দেশনাকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।' তিনি আরও বলেন, দরকার পড়লে আমরা তুরস্কের অর্থনীতি বন্ধও করে দিতে পারি।' ঘরবাড়ি হারিয়েছে লক্ষাধিক মানুষ :জাতিসংঘ এদিকে সিরিয়ার উত্তরের কুর্দি অধু্যষিত অঞ্চলে তুরস্কের অভিযানে এক লাখের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। বুধবার অভিযান শুরুর পর তারা পালিয়েছে। সিরিয়ায় শরণার্থী সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, তুরস্কের অভিযানের ফলে সেখান থেকে লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে সহায়তাকারী সংস্থাগুলো বলেছে, এ সংখ্যা সাড়ে চার লাখের বেশি হবে। এদের অধিকাংশই তাল আবিয়াদ থেকে পালিয়েছে। যারা এখন মৃতু্য ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ওসিএইচএ'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের বোমা হামলায় পানি স্টেশনের মতো অন্যান্য সেবামূলক বেসামরিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসাকেহ এলাকায় খাবার পানির সংকটে রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। কুর্দি এলাকায় আইএসের গাড়িবোমা হামলা অন্যদিকে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তুরস্কের হামলার মধ্যেই কুর্দি নিয়ন্ত্রিত শহর কামিশলিতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) গাড়িবোমা হামলা চালিয়েছে। শুক্রবারের এ হামলায় তিন বেসামরিক নিহত ও আরও ৯ জন আহত হয়েছে। তুর্কি বাহিনীর তীব্র গোলাবর্ষণে বিপর্যস্ত কুর্দি নিয়ন্ত্রণাধীন সিরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর কামিশলির একটি কারাগার থেকে পাঁচ জঙ্গি পালিয়েছে বলে কুর্দিরা আগেই জানিয়েছিল। জঙ্গিগোষ্ঠীটির বিদেশি এক নারী সদস্য পরে নিরাপত্তারক্ষীদের লাঠি ও পাথর দিয়ে আঘাত এবং তাঁবুতে আগুন ধরাতে গিয়ে ধরাও পড়েছেন। আইএস কামিশলিতে গাড়িবোমা হামলার দায় স্বীকার করে কুর্দি গেরিলারাই তাদের লক্ষ্য ছিল বলে জানিয়েছে। হামলায় হতাহতদের সবাই বেসামরিক।