মোদি-শি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক

আলোচনায় কাশ্মীর প্রসঙ্গই ওঠেনি, প্রাধান্য বাণিজ্যে

কাশ্মীর ইসু্যতে চীনকে চুপ করিয়ে রাখাই ভারতের বড় সাফল্য ভারত ও চীনের মধ্যে নতুন যুগ শুরুর ঘোষণা দুই শীর্ষ নেতার

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দুইদিনের ভারত সফরে কাশ্মীর নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মোদি-শি বৈঠকে প্রাধান্য পেয়েছে মূলত বাণিজ্য। ভারতের তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের মামালস্নাপুরামের সমুদ্র সৈকতের কাছে একটি অবকাশযাপন কেন্দ্রে শনিবার অনানুষ্ঠনিক বৈঠকে আলাপরত দুই নেতা -আউটলুক ইনডিয়া
কাশ্মীর নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে সেই প্রসঙ্গই ওঠেনি। ধারণা করা হচ্ছিল, মোদির সঙ্গে বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলবেন জিনপিং। তবে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মোদি-শি জিনপিংয়ের দুই দফা অনানুষ্ঠনিক বৈঠকে মূলত প্রাধান্য পেয়েছে বাণিজ্য আলোচনা। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ তামলনাড়ুর চেন্নাই থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে মামালস্নাপুরামের সমুদ্র সৈকতের কাছে একটি অবকাশযাপন কেন্দ্রে শুক্র ও শনিবার দুই দফা বৈঠক হয় মোদি ও জিনপিংয়ের। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে মোদি বলেন, 'এই শীর্ষ সম্মেলন ভারত ও চীনের পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্ককে জোরদার করতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। আর চেন্নাইয়ের এই বৈঠকে দুই দেশই পারস্পরিক সম্পর্কে একটি নতুন যুগ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।' চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর (মোদির) সঙ্গে আমার বন্ধুর মতো কথা হয়েছে। খুবই আন্তরিকভাবে কথা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে। দুই দেশের সম্পর্কে নতুন যুগ শুরু হলো।' ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে বলেন, 'কাশ্মীর ইসু্য উত্থাপন ও আলোচনায় হয়নি। আমাদের বিপরীত পক্ষের (চীন) কাছে এটা একেবারেই স্পষ্ট যে, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।' মোদি-জিনপিং বৈঠক প্রসঙ্গে গোখলে বলেন, 'দুই নেতা খুবই ভালো সময় কাটিয়েছেন। তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতের ঘাটতি, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজে বের করা নিয়ে কথা হয়েছে। দুই দেশই মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের শিকার। সন্ত্রাসবাদ যাতে দুই দেশের বহুস্তরীয় সংস্কৃতি ও সমাজ নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।' কাশ্মীর নিয়ে কোনো অস্বস্তি যাতে মাঝপথে তৈরি না হয়, সে জন্য কোনো প্রশ্ন ওঠেনি মামালস্নাপুরামে শি-মোদির দুই দফা বৈঠকে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এই বৈঠকের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক এবং দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে যে চাপ তৈরি করা শুরু করেছিল বেইজিং, তা থেকে বেরিয়ে কিছুটা খোলা বাতাস বইয়ে দেয়া গেছে সম্পর্কে। আপাতত কাশ্মীর নিয়ে কোনো বড় মাপের বিরোধিতা বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে আসবে না এমনটাই আশা করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার মতে, 'দ্বিপক্ষীয় স্বস্তি'ই হলো মামালস্নাপুরামের মূল কথা। দুই শীর্ষ নেতার এই বৈঠককে চলতি পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের জন্য বার্তাবহ বলেও মনে করা হচ্ছে। সফরের প্রথম দিন শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে মহাবলীপুরম মন্দির ঘুরে দেখেন জিনপিং, যা এখন মামালস্নাপুরাম নামে পরিচিত। তারপর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন দুই নেতা। অনুষ্ঠানের পর নৈশভোজও সারেন তারা। এক সংবাদ সম্মেলনে দিলিস্নর পক্ষ থেকে বলা হয়, 'কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে সাধারণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করে ভারত ও চীন তার বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে রাজি হয়েছে।' চীনা প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, 'তামিলনাড়ুর সঙ্গে চীনের সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাসকে এমনভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, যাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিকাশ আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর তা এশীয় সভ্যতার পক্ষে নতুন গৌরবের হয়।' ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রথম অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনটি হয় গত বছর, ডোকলামে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ৭৩ দিনের উত্তেজনার কয়েক মাস পর। সেই বৈঠক হয়েছিল চীনের শহর উহানে। তিন দিন আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারত সফর আসেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এর আগে জিনপিংয়ের ভারত সফরকে কেন্দ্র করে দেশটি সফর করেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, তিনি কাশ্মীর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে সমর্থন করবে তার সরকার। এ সময় কাশ্মীর সংকটকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের ওপর জোর দেন তিনি। এরপর কাশ্মীর ইসু্যতে সমর্থন দেয়ার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানায় ইসলামাবাদ। চীনের প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় দিলিস্ন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'কাশ্মীর বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট এবং অনড় রয়েছে। আমরা আগেই বলেছি, কাশ্মীর আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। চীনও আমাদের এই অবস্থান ভালো করেই জানে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অন্য কোনো দেশ কথা বলুক, এটা আমরা চাই না।'