সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান

বন্দিশিবির থেকে পালাচ্ছে আইএস পরিবার

বন্দি জঙ্গিদের পাহারাকে আর অগ্রাধিকার দেয়া হবে না :কুর্দি তুর্কি অভিযানে চার লাখ মানুষ বাস্তুহারা হবে :জাতিসংঘ

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বন্দিশিবির থেকে পালাচ্ছে আইএস পরিবারের সদস্যরা
যাযাদি ডেস্ক কুর্দি মিলিশিয়াদের সঙ্গে তুরস্কের সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াইয়ের ফাঁকে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহরের বন্দিশিবির থেকে পালাচ্ছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নিহত যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা। কুর্দি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে রোববার গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদসূত্র: আল-আরাবিয়া, আনাদোলু এজেন্সি, বিবিসি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ার যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা 'সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস' জানিয়েছে, এরই মধ্যে বন্দিশিবির থেকে আইএস পরিবারগুলোর ১০০ সদস্য পালিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিরিয়ায় কুর্দি নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বলছে, 'রাকার উত্তরে আইন ইসা শিবিরে গোলাবর্ষণের মানে হচ্ছে দায়েশ (আইএস) সংগঠনটিকে পুনর্জীবন দেয়া।' এদিকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের অভিযান অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বন্দি জঙ্গিদের পাহারার বিষয়টিকে আর অগ্রাধিকার দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে কুর্দি গেরিলারা। সন্দেহভাজন কয়েক হাজার আইএস যোদ্ধা এখনো কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) হাতে বন্দি রয়েছে। শনিবার এসডিএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রেদুর জেলিল টেলিভিশনে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, 'তুরস্কের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দিশিবিরগুলোতে আইএস জঙ্গিদের আটক রাখার প্রক্রিয়াটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'আইএস জঙ্গিদের বন্দি রাখা কারাগারগুলোতে পাহারা দেয়ার বিষয়টি এখন আর (আমাদের) অগ্রাধিকারের মধ্যে নেই। বন্দিশিবিরগুলোর সুরক্ষা নিয়ে যারা চিন্তিত হবে, তারা বিষয়টি সমাধান করার ক্ষেত্রে এগিয়ে এলে স্বাগত জানানো হবে।' আইএস বন্দিদের ওপর নজরদারির চেয়ে এসডিএফ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহর ও জনগণের সুরক্ষায় বেশি মনোযোগী বলে জানিয়েছেন রেদুর। তুরস্কের অভিযান সিরিয়ায় আইএসের পুনরুত্থানের পথ করে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ওই শহর দুটিতে আইএস জঙ্গিদের প্রাণঘাতী দুটি গাড়িবোমা হামলার এক দিন পর রেদুরের এ মন্তব্য পাওয়া গেল। এসডিএফ জানিয়েছে, তাদের সাতটি কারাগারে এখনো ১২ হাজারের বেশি সন্দেহভাজন আইএস সদস্য আছে, এর মধ্যে চার হাজারই বিদেশি নাগরিক। সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত অংশে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে তুমুল গোলাবর্ষণ শুরু করেছে তুরস্ক। 'অপারেশন পিস স্প্রিং' নামের তাদের এই অভিযান চলাকালে দুইপক্ষের লড়াইয়ে সীমান্তের উভয় পাশে এরই মধ্যে শিশুসহ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। কুর্দি গেরিলাদের 'সন্ত্রাসী' হিসেবে আখ্যা দেয়া আঙ্কারা বলছে, তারা কুর্দিদের সীমান্ত থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সিরিয়ার ভেতর ৩০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত একটি 'নিরাপদ অঞ্চল' প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তুরস্কে থাকা ৩০ লাখের বেশি সিরীয় শরণার্থীকে পুনর্বাসন করবে। তুর্কি অভিযানে চার লাখ মানুষ বাস্তুহারা হবে: জাতিসংঘ এদিকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীর ওপর তুরস্ক যে সামরিক অভিযান শুরু করেছে, তার কারণে বাড়িঘর ফেলে পালাতে বাধ্য হয়েছে সেখানকার এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ। জাতিসংঘ এই হিসাব দিয়ে বলছে, অভিযান চলতে থাকলে সংখ্যাটা হবে চার লাখের বেশি। রোববার জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার মুখপাত্র জেনস লায়ের এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, 'দেশটিতে এমন একটা পরিকল্পিত অভিযানের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও তার আশপাশের এলাকার চার লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচু্যত হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়েছে।' জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ভয়াবহ হুমকি ও ঝুঁকির মুখে থাকা এসব মানুষের জন্য সহায়তা ও তাদের সুরক্ষিত করতে উভয় পক্ষ ও গোটা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্কে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করছে জার্মানি ও ফ্রান্স অন্যদিকে সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোয় তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স ও জার্মানি। ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, পূর্বপরিকল্পিত অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রাখছে তারা। দেশটি জানায়, তুরস্কে এমন যুদ্ধ সরঞ্জাম তারা বিক্রি করবে না, যা সিরিয়া অভিযানে ব্যবহার করা হতে পারে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই এমন ঘোষণা দেয় জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, 'জার্মানি এমন কোনো সামরিক সরঞ্জাম তুরস্ককে দেবে না, যেটা তারা সিরিয়া অভিযানে ব্যবহার করতে পারে।' অবশ্য এর প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, 'এটা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন, টিকে থাকার প্রশ্ন। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায় শত্রম্নপক্ষই শক্তিশালী হবে।'