সিরিয়ায় অভিযানের জের

তুরস্কের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্র নয়, বাশারকেই কুর্দিদের রক্ষা করতে হবে: ট্রাম্প

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযানের জেরে দেশটির দুটি মন্ত্রণালয় ও তিনজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সোমবার যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর পাশাপাশি আশু যুদ্ধবিরতির দাবি জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ানকে ফোন করেছিলেন বলে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানিয়েছেন। 'যত দ্রম্নত সম্ভব' মার্কিন প্রেসিডেন্ট অঞ্চলটি পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানান তিনি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স এক বিবৃতিতে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী, জ্বালানিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, 'তুরস্ক সরকারের পদক্ষেপে নিরপরাধ বেসামরিকরা বিপদগ্রস্ত হয়েছে, ওই অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়েছে এবং আইএসকে (ইসলামিক স্টেট) পরাজিত করার উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।' এছাড়া সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নিষেধাজ্ঞাগুলোকে 'অত্যন্ত কঠোর' বলে বর্ণনা করে এটি তুরস্কের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন। মুচিনের পাশে থাকা ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স বলেন, 'তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্ত ইসু্যগুলোতে আশু যুদ্ধবিরতিতে তুরস্ক রাজি না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে এবং আরও কঠোর হবে।' তিনি আরও বলেন, সিরিয়ায় আক্রমণ চালানোর জন্য তুরস্ককে কোনো সবুজ সংকেত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়ায় তুরস্কের 'অগ্রহণযোগ্য' আক্রমণের কারণে বন্দি অনেক আইএস যোদ্ধা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে অভিযোগ করেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো তুরস্কে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। এর জবাবে তুরস্ক বলেছে, তারা ইইউয়ের 'অন্যায় ও পক্ষপাতদুষ্ট' আচরণের কারণে তাদের সঙ্গে বিদ্যমান সহযোগিতার সম্পর্কগুলো পর্যালোচনা করে দেখবে। এদিকে, জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একজন যোদ্ধাও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে পালানোর সুযোগ পাবে না বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযান ঘিরে পশ্চিমা বিশ্বের ভয়ের জবাবে এই কথা বলেছেন এরদোয়ান। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমরা নিশ্চিত করবো, আইএসের কোনো জঙ্গিই সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়তে পারবে না। কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযানে জিহাদিরা গণহারে পালাতে পারে; পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর এমন উদ্বেগ ভন্ডামিপূর্ণ।' তিনি আরও বলেন, 'আইএসের বিরুদ্ধে তুরস্কের লড়াইয়ে আজকে যারা নীতিবাক্য ছুড়ছে, তারাই ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিদেশি সন্ত্রাসী যোদ্ধাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল।' যুক্তরাষ্ট্র নয়, বাশারকেই কুর্দিদের রক্ষা করতে হবে :ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি গেরিলাদের বিরুদ্ধে যখন তুরস্ক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কুর্দিদের রক্ষা করার ব্যাপারে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তার দেশকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সাত হাজার মাইল দূর থেকে এ দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়। ট্রাম্প বলেন, 'সিরিয়া এবং বাশারকে কুর্দিদের রক্ষা করতে দিন। আমি আমার জেনারেলদের বলেছি, আমরা কেন সিরিয়ার যুদ্ধে যাব এবং শত্রম্নর দেশকে রক্ষা করব?' তিনি আরও বলেন, যারা সিরিয়ার কুর্দিদের রক্ষার জন্য সাহায্য করতে চায়, তারা খুব ভালো কথা বলছে- তা সে রাশিয়াই হোক, চীন অথবা নেপোলিয়ান বোনাপার্ট। আমি আশা করি, তারা সবাই এই মহান কাজটি করবে। আমরা সাত হাজার মাইল দূর থেকে এটা পারব না।' সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে তুরস্ক :সৌদি আরব অন্যদিকে, তুরস্কের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ এনেছে সৌদি আরব। যুক্তরাজ্যে সৌদি আরবের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর বিন সুলতান আল-সোউদ মঙ্গলবার এমন অভিযোগ করেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটে দেয়া বক্তব্যে সিরিয়ায় তুর্কি অভিযান নিয়ে নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন এই কূটনীতিক। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতরা সচরাচর এসব বিষয়ে মন্তব্য করেন না। তবে নীরবতার রীতি ভেঙে এদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, সৌদি-ইরান বিবাদসহ সমসাময়িক অন্যান্য বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ। তিনি বলেন, 'উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তুর্কি হামলা এ অঞ্চলের জন্য একটি বিপর্যয়। এটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।'