কাশ্মীর সংকট

সর্বনাশের ঝুঁকি সত্ত্বেও অনীহা বিশ্বের

কৌশলগত সহযোগী দেশ হিসেবে ভারতের গুরুত্ব বিশ্বে অনেকটাই বেড়ে গেছে

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাতিসংঘে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর আড়াই মাস হতে চলেছে সেখানকার লাখ লাখ মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছে। জীবনযাপনের ওপর নজিরবিহীন বিধিনিষেধ আর নিরাপত্তা নজরদারিতে ক্রোধে ফুঁসছে কাশ্মীর উপত্যকা। একইসঙ্গে ক্রুদ্ধ ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী পাকিস্তানও। গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্বনেতাদের বলার চেষ্টা করেছেন কাশ্মীরে ভারতের সর্বশেষ বিতর্কিত ভূমিকায় শুধু যে কাশ্মীরিরাই বিপর্যস্ত হচ্ছে তাই নয়, তা পুরো বিশ্বকেই হুমকিতে ফেলেছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক যুদ্ধ তথা সর্বনাশের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ভারতের বাজার এবং পাকিস্তানের হতাশা প্রশ্ন উঠেছে, এত সাংঘাতিক হুঁশিয়ারি কেন উচ্চারণ করলেন ইমরান খান? আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রুসির গবেষক আদিত্য দেব বলেন, 'পাকিস্তান গত কয়েক বছর ধরেই এই কৌশলই অনুসরণ করছে। কাশ্মীর ইসু্যতে এই কথা বলেই তারা বিশ্বের নজর কাড়তে চাইছে। কারণ ভারত যা করছে, তার বিরুদ্ধে কার্যকর কিছু করার বিকল্প তাদের খুব একটা নেই। সুতরাং জাতিসংঘে ইমরান খান যা বলেছেন, সেটা তাদের হতাশারই প্রকাশ।' তার মতে, কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল যে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না, সেই কারণেই ইমরান খানের এই হতাশা। কিন্তু কেন কাশ্মীর নিয়ে এবং পাকিস্তানের উদ্বেগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে এতটা অনীহা? এই গবেষক মনে করেন, কৌশলগত সহযোগী দেশ হিসেবে ভারতের গুরুত্ব বিশ্বে অনেকটাই বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, 'ভারতকে অনেক দেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি সহযোগী দেশ হিসেবে মনে করছে। অর্থনৈতিক এবং সামরিক কৌশলগতভাবে তারা ভারতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি সৌদি আরবও সম্প্রতি ভারতে বড়মাপের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। আসলে বাণিজ্যিক সহযোগী হিসেবে ভারতের যে গুরুত্ব, সেটা অন্যান্য গুরুত্ব এবং বিবেচনাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।' কাশ্মীরে অনীহা এবং চীন ফ্যাক্টর দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলি। তিনি বলেন, 'কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগ নিয়ে কেন আগের মতো যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা এখন মাথা ঘামাচ্ছে না, তার পেছনে মূল কারণ চীন। শক্তিধর দেশগুলো এখন সবচেয়ে উৎকণ্ঠার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চীনকে। তিনি বলেন, 'চীনের শক্তি বৃদ্ধিতে তাদের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে। তারা শঙ্কিত যে, তাদের এতদিনের প্রভাব প্রতিপত্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। চীন বিশ্বব্যাপী এমন এক রাজনীতি এবং অর্থনীতির কাঠামো তুলে ধরছে, যেটা অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য আকর্ষণীয় একটি মডেল হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। এতে করে, গত কয়েক শতাব্দী পর, পাশ্চাত্যের প্রভাব-প্রতিপত্তি হঠাৎ করে ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে কাশ্মীর নিয়ে চীন যখন ভারতের সমালোচনা করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যরা চীনের সুরে সুর মিলিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে পারে না।' পাকিস্তানের আফগান অস্ত্র তাহলে দেন-দরবার, আন্তর্জাতিক ফোরামে গিয়ে কাশ্মীরিদের দুর্দশা নিয়ে কথা বলা ছাড়া কি পাকিস্তানের সামনে আর কোনো উপায় নেই? যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ তৈরির ক্ষমতা কি পাকিস্তান পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের মতো পাকিস্তানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব না থাকলেও আফগানিস্তান ইসু্যতে যুক্তরাষ্ট্রকে ইসলামাবাদের দিকে তাকাতে হবে। তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা যেভাবে হঠাৎ করে ধসে পড়েছে, তাতে আফগান প্রশ্নে পাকিস্তানের অবস্থান অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এখন পাকিস্তানের সহযোগিতা দরকার। সুতরাং পাকিস্তানের উদ্বেগও তাদেরকে শুনতে হবে। যুদ্ধের কথা কি ফাঁকা আওয়াজ? কাশ্মীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ বিপজ্জনক যুদ্ধে গড়াতে পারে বলে যে হুঁশিয়রি ইমরান খান দিয়েছেন, তা কি শুধুই আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা? গবেষক আদিত্য দেব বলেন, 'যুদ্ধের ঝুঁকি যে নেই, সেটা পুরোপুরি বলা যায় না। কিন্তু তার আগে আরও অনেক কিছু ঘটতে হবে।' আদিত্য বলেন, 'এর আগে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হলে, কিছু দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসত। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে প্রধান যে উদ্বেগ শোনা যাচ্ছে, তা হলো- কাশ্মীরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বা চলাফেলার ওপর বিধিনিষেধ নিয়ে। অঞ্চলের মর্যাদা লোপ নিয়ে তাদের চিন্তিত মনে হচ্ছে না, তারা মনে করছে এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।' সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ