তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ পরমাণু বোমা নিয়ে বিপাকে ট্রাম্প

আঙ্কারা জিম্মি করে রেখেছে! ওয়াশিংটনের হিসাব-নিকাশ জটিল হয়ে পড়েছে

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ শতাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এর বাইরে ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে শতাধিক ঘাঁটি প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এসব ঘাঁটির মধ্যে তুরস্কের ইনসিরলিক বিমান ঘাঁটিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্কের এই ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি পরমাণু বোমা রয়েছে। যেগুলো শীতল যুদ্ধের সময়কার বি-৬১ বোমা। তুরস্কে থাকা এই ৫০টি মার্কিন পরমাণু বোমা নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, বোমাগুলো এখন চাইলেও সরাতে পারছে না ওয়াশিংটন। আঙ্কারা সেগুলো এক প্রকার জিম্মি করে ফেলেছে। সিরীয় সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে ইনসিরলিক ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সঙ্গে তুর্কি সেনারাও রয়েছে। ঘাঁটিটি যৌথভাবে পরিচালিত হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না আঙ্কারার। বিশেষ করে এরদোয়ানের শত্রম্ন ফেতুলস্না গুলেনের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত ও এরদোয়ানের ইসলামিক ভাবধারার ফলে ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ তিক্ততা চলছে। সম্প্রতি সিরিয়ার মানবিজে তুরস্কের কুর্দিবিরোধী অভিযানের ফলে দুই দেশের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। কুর্দিদের দীর্ঘদিনের বন্ধু মার্কিন প্রশাসন। সে কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্ককে সেখানে অভিযান বন্ধ করতে বললেও তা পাত্তাই দিচ্ছেন না এরদোয়ান। তুরস্কের মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে মজুত রাখা অর্ধ শত পারমাণবিক বোমাই এখন ওয়াশিংটন ও আঙ্কারার মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের সম্ভাব্য দেন-দরবারের মূল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই বিমানঘাঁটি ওয়াশিংটনের হিসাব-নিকাশকে জটিল করে তুলেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মার্কিন কর্মকর্তারা এসব বোমা সরাতে পরিকল্পনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্ধৃতিতে খবরে বলা হয়েছে, ওই বোমাগুলো এখন এরদোয়ানের জিম্মিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই বোমাগুলো ইনসিরলিক বিমানঘাঁটি থেকে অন্যখানে সরিয়ে নেয়ার অর্থ হবে তুর্কি-মার্কিন জোটের কার্যত অবসান। বোমাগুলো বারবার সরিয়ে নেয়ার কথা বিবেচনা করা হলেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। তুরস্কে এসব বোমার অস্তিত্ব নিয়ে কর্মকর্তারা আলোচনা করতে চাইছেন না। কিন্তু বিষয়টি এখন 'ওপেন সিক্রেট'। বোমাগুলো বহন করতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিমান ব্যবহার করতে হবে। পারমাণবিক বোমা বহন করতে তুরস্কের কোনো বিমান সত্যয়ন করা নেই। সাবেক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, বোমাগুলোর কী করা যায়, তা নিয়ে বারাক ওবামা প্রশাসনে উলেস্নখযোগ্য আলোচনা হয়েছে। দুটি কারণে তারা বোমাগুলো সরাতে চাইছে, তা হচ্ছে- ওবামার নিরস্ত্রীকরণ এজেন্ডা ও তুরস্কে ২০১৬ সালে সামরিক অভু্যত্থান চেষ্টার পর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কারণ অভু্যত্থানের বেশ কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারী ওই বিমানঘাঁটি ব্যবহার করেছেন। সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তরে উদ্যোগ নেয়ার আগে বিমানঘাঁটির বৈদু্যতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল এরদোগান প্রশাসন। সাবেক এক মার্কিন কর্মকর্তার তথ্যমতে, তুর্কি কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া এই আভাস দিচ্ছে যে, তুরস্ক নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর পরই এগুলো সরানো হবে। গত মাসে এরদোয়ান সেই হুমকিই দিয়েছেন। দলীয় এক সমাবেশে তিনি বলেন, এটা অগ্রহণযোগ্য যে, তুরস্কর নিজেদের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না। তিনি দাবি করেন, পৃথিবীতে এমন কোনো উন্নত দেশ নেই, যাদের পারমাণবিক অস্ত্র নেই। এখন, তুরস্ক আসলেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে কিনা বা তৈরি হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বোমাগুলো সরিয়ে নিতে পারবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যে বিপাকে রয়েছে, তা কর্মকর্তাদের বক্তব্যেই উঠে এসেছে। সংবাদসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস