ব্রেক্সিট নিয়ে জটিলতা

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ব্রেক্সিট হবে :বরিস সরকার

বিরোধীদের চাপের মুখে বিচ্ছেদ পেছানোর অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস ব্রিটিশ সরকার ২৮ অক্টোবরের মধ্যে চুক্তির বাস্তবায়ন চায়

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ব্রিটিশ মন্ত্রী মাইকেল গোভ
যাযাদি ডেস্ক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের স্বাক্ষরবিহীন চিঠিতে ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া) পেছানোর অনুরোধের পরও ৩১ অক্টোবরেই তা কার্যকর করা হবে বলে রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, বিরোধীদের চাপের মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে পাঠানো চিঠিতে ব্রেক্সিট পেছানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদসূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান শনিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তির ধারাবাহিকতায় কয়েকটি ধারা পাস করাতে ব্যর্থ হন বরিস জনসন। ওইদিন বিরোধীদের দাবির মুখে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রেক্সিট পেছানোর অনুরোধ জানাতে একটি বিল পাস হয়। চুক্তিবিহীন বা 'নো-ডিল ব্রেক্সিট'র প্রস্তুতির দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ মন্ত্রী মাইকেল গোভ বলেন, 'আমরা ৩১ অক্টোবরেই ইইউ ছাড়ছি। এমনটি করার সামর্থ্য ও যোগ্যতা আমাদের রয়েছে।' প্রধানমন্ত্রীর দেরি করার অনুরোধের চিঠির বিষয়ে গোভ বলেন, 'পার্লামেন্টের আবশ্যকতার জন্য চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পার্লামেন্ট প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেনি, সরকারের নীতি বা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা পাল্টাতে পারে না।' শনিবার এমপিরা চুক্তি অনুমোদনে দেরির পদক্ষেপে সমর্থন দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বরিসকে বিরোধীদের পাস করা 'বেন অ্যাক্ট' মেনে ইইউ-এর কাছে সময় বাড়ানোর ওই আবেদন জানাতে হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিকর্ যাব বলেন, 'আগামী সপ্তাহে চুক্তিতে পার্লামেন্টে এমপিদের যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া যাবে বলে তার আস্থা আছে। আর তাই ব্রেক্সিট এখনো নির্ধারিত সময়েই হওয়া সম্ভব।' ব্রিটিশ সরকার আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যেই চুক্তি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী বরিস ইইউ'কে চিঠি দিলেও নিজের সই করা আরেকটি চিঠিতে এটাও লিখেছেন, ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেয়া হবে মারাত্মক 'ভুল'। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্কের কাছে বরিস জনসন মোট তিনটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে একটি 'বেন অ্যাক্ট' নামের সেই আইনের ফটোকপি, যা তাকে চিঠি লিখতে বাধ্য করেছে। দ্বিতীয়টি, ব্রিটিশ সরকার শুধু এ আইন অনুযায়ী কাজ করছে, এমনটি জানিয়ে ইইউতে নিযুক্ত ব্রিটিশ দূতের পাঠানো একটি নোট এবং তৃতীয় আরেকটি চিঠি; যেটিতে বরিস জানিয়েছেন, তিনি সময় আর বাড়াতে চান না। এর আগে ব্রেক্সিটের জন্য নির্ধারিত ৩১ অক্টোবরের চূড়ান্ত সীমা পেছানোর জন্য 'মরে গেলও' তিনি কোনো অনুরোধ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন বরিস। কিন্তু গত মাসে পার্লামেন্টে বিরোধীদের পাস করা একটি আইন অনুযায়ী, ব্রেক্সিটের চূড়ান্ত সময়সীমা আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ করে ইইউয়ের কাছে চিঠি পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। ওই চিঠিতে বরিস জনসন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই আমি বলে আসছি এবং আজ পার্লামেন্টকেও বলেছি, আমার দৃষ্টভঙ্গি ও সরকারের অবস্থান হচ্ছে, সময় আরও বাড়ালে যুক্তরাজ্য ও আমাদের ইইউ অংশীদারদের স্বার্থ এবং আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।' ৩১ অক্টোবরের আগেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মাধ্যমে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আইনগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত করা যাবে, চিঠিতে এ ব্যাপারে নিজের আস্থার কথাও জানিয়েছেন বরিস। তার অনুরোধ জানানো চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন টুস্ক। তিনি বলেন, 'কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে তা নিয়ে আমি এখন ইইউ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করবো।' অন্যদিকে, ব্রেক্সিটে বিলম্ব করার বিষয়ে 'ইইউয়ের কারও আগ্রহ নেই', ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে তার দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরও ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের ইইউ যুক্তরাজ্যের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ব্রেক্সিট ইসু্যতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন। নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তবে দীর্ঘ আলোচনা আর নানা নাটকীয়তার পর গত ১৭ অক্টোবর চুক্তির ব্যাপারে ইইউ-এর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায় বরিস জনসনের সরকার। শনিবার এ চুক্তি বা সমঝোতা পেছানোর পক্ষে রায় দেয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। সে অনুযায়ী ইইউ-এর কাছে ব্রেক্সিট পেছাতে চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আর ওই চিঠিতে তার স্বাক্ষর ছিল না।