জাপানে রেইওয়া যুগের সূচনা

সিংহাসনে সম্রাট নারুহিতোর অভিষেক

দেশটির ১২৬তম সম্রাটের অভিষেকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশের প্রতিনিধি

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাপানের প্রাণকেন্দ্র টোকিওর ইমপেরিয়াল প্যালেসের 'হল অব পাইনে' মঙ্গলবার রাজকীয় আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ১২৬তম সম্রাট হিসেবে 'তাকামিকুরা' (চন্দ্রমলিস্নকা) সিংহাসনে আরোহণ করেছেন ৫৯ বছর বয়সি নারুহিতো। এদিন বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি নতুন এই সম্রাটের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী পোশাক গায়ে জড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন সম্রাট নারুহিতো -রয়টার্স
রীতি মাফিক সাড়ম্বর আয়োজনে বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করলেন জাপানের নতুন সম্রাট নারুহিতো। আর নতুন সম্রাটের অভিষেকের মধ্যে দিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে নতুন 'রেইওয়া' যুগের সূচনা হলো। রেইওয়া শব্দের অর্থ 'শৃঙ্খলা ও ঐকতান'। সংবাদসূত্র : বিবিসি, বিডি নিউজ সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ছাড়ার পর তার ছেলে যুবরাজ নারুহিতো গত ১ মে প্রতীকী আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সম্রাটের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন। জাপানি রীতি অনুযায়ী, নতুন সম্রাটের অভিষেকের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আচার পালন করতে হয় বলে পাঁচ মাস পর হলো মূল আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার দুপুরে টোকিওর ইমপেরিয়াল প্যালেসের 'হল অব পাইনে' রাজকীয় আয়োজনের মধ্যে দিয়ে জাপানের 'তাকামিকুরা' (চন্দ্রমলিস্নকা) সিংহাসনে আরোহণ করেন ৫৯ বছর বয়সী নারুহিতো। এর মধ্য দিয়ে তিনি অভিষিক্ত হন জাপানের ১২৬তম সম্রাট হিসেবে। নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলিয়াম আলেক্সান্ডার, স্পেনের রাজা ফিলিপ, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেয়েল ওয়াংচুক, ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লস এবং মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিও অংশ নেন জাপানের নতুন সম্রাটের অভিষেকে। নারুহিতোর বাবা এমেরিটাস সম্রাট আকিহিতো ৮৫ বছর বয়সে গত ৩০ এপ্রিল স্বেচ্ছায় সিংহাসন ছেড়ে দেন। বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। আকিহিতোই প্রথম সম্রাট যিনি স্বেচ্ছায় সিংহাসন ছেড়েছেন। অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দিনের শুরুতে তিনটি ধর্মীয় উপসনালয়ে প্রার্থনা সারেন নতুন সম্রাট নারুহিতো। পরে সম্রাজ্ঞী মাসাকো ও পরিবারের সদস্যরা উপসনালয়গুলো প্রদক্ষিণ করেন। স্থানীয় সময় বেলা ১টায় রাজপ্রসাদের হলে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। উনিশ শতকে তৈরি করা কমলা রঙের রাজকীয় পোশাক পরে 'সেইডেন-মাৎসু-নো-মা'তে (সিংহাসন কক্ষ) প্রবেশ করেন সম্রাট নারুহিতো। তার পেছনে সাম্রাজ্যিক ক্ষমতার প্রতীক তলোয়ার, রত্ন এবং সিলমোহর নিয়ে প্রবেশ করেন রাজকীয় অধ্যক্ষ। এরপরই সম্রাজ্ঞী মাসাকো অনুষ্ঠানস্থলে আসেন জাপানের ঐতিহ্যবাহী 'কিমোনো' পরে। সিংহাসন কক্ষে প্রবেশের পর বেগুনি রঙের পর্দা ঘেরা 'তাকামিকুরা' সিংহাসনে বসেন নতুন সম্রাট। তার পাশে কিছুটা কম উচ্চতার মিচিডাই সিংহাসনে বসেন সম্রাজ্ঞী মাসাকো। নির্ধারিত সময়ে দুজনের আসনের সামনে থেকে পর্দা সরে যায়। ড্রামের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই জাপানি কায়দায় ঝুঁকে সম্রাটকে সম্মান জানান। বিদেশি অতিথিরাও এ সময় দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। এরপর রাজকীয় ভাষণ দেন পরে সম্রাট নারুহিতো। ভাষণের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রাজকীয় ভাষণে নিজের সিংহাসনে আরোহণের কথা ঘোষণা দিয়ে নারুহিতো বলেন, 'আমি প্রতিজ্ঞা করছি, বিধান অনুযায়ী দেশের এবং জনগণের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করব।' তিনি বলেন, 'আমার চিন্তা-চেতনায় সবসময় জনগণের সুখ এবং বিশ্ব শান্তির কামনা থাকবে।' ভাষণ শেষে জাপানি কায়দায় মাথা ঝুঁকিয়ে সম্রাটকে অভিবাদন জানান আবে। সেখানে দাঁড়িয়েই নতুন সম্রাটকে অভিনন্দন জানিয়ে ভাষণ দেন তিনি। নতুন সম্রাটকে অভিনন্দন জানিয়ে শিনজো আবে বলেন, 'নতুন সম্রাটের নেতৃত্বে আমরা দেশকে আরও অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাব। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি কামনায় এবং বিশ্ব মানবের কল্যাণে অবদান রাখব।' প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণ শেষ করে সম্রাটের দীর্ঘ জীবন কামনা করে তিনবার উচ্চকণ্ঠে 'বানজাই' ধ্বনি দেন। এ সময় অতিথিরা তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। এর ঠিক পরপরই কামানের ২১ বার তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সিংহাসন আরোহণ অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ। সিংহাসনের পর্দা আবারও নামিয়ে দেয়া হলে সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী আসনের পেছনের অংশ দিয়ে কক্ষে নেমে তাতামি মাদুর পাতা একটি অংশে এসে দাঁড়ান। রাজপরিবারের অন্য সদস্যরা পেছনের দিকে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ টাইফুন হাগিবিসের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে জাপান। টাইফুনের আঘাতে ৮০ জনের প্রানহানি ঘটেছে। সে কারণে নিহত এবং তাদের পরিবারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নারুহিতোর এই অভিষেক অনুষ্ঠানে প্যারেড বাতিল করা হয়। জাপানের সম্রাটের রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলেও তিনিই জাতীয় প্রতীক। ১৯৬০ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি জন্ম নেয়া নারুহিতো রাজপরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে জাপানের বাইরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৯১ সালে ৩১ বছর বয়সে তিনি যুবরাজ হিসেবে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত হন। দুই বছর পর ১৯৯৩ সালে হার্ভার্ডে পড়া মাসাকোর সঙ্গে বাগদান হয় নারুহিতোর। ২০০১ সালে এ দম্পতির একমাত্র সন্তান প্রিন্সেস আইকোর জন্ম হয়।