পানি স্বল্পতার কবলে বিশ্বের ১১ শহর

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক পৃথিবীপৃষ্ঠে ৭০ শতাংশ জায়গা জুড়ে আছে জলাধার। তবে বিশুদ্ধ খাবার পানির উৎস রয়েছে মাত্র তিন শতাংশ। খরাক্রান্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জনবহুল শহর কেপটাউন হলো প্রথম শহর, যেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানি ফুরিয়ে যাওয়ার হুমকি রয়েছে। এ বিষয়ে অনেক আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছিলেন। তবে এবার এই তালিকায় নাম লেখাতে বসেছে বিশ্বের আরও ১১টি শহর। শহরগুলোতে ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে বিশুদ্ধ পানির পরিমাণ। অধিকাংশই আবার রাজধানী কিংবা বড় শহর। এর মধ্যে ব্রাজিলের সাওপাওলো, ভারতের ব্যাঙ্গালুরু, চীনের বেইজিং, মিসরের কায়রো, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, রাশিয়ার মস্কো, তুরস্কের ইস্তাম্বুল, যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি, মেক্সিকো সিটি, লন্ডন ও জাপানের টোকিও। বিশ্বসংস্থাগুলো বলছে, পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী কর্মকান্ড, চাষাবাদ, শিল্পকারখানার বর্জ্য, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনাই মূলত এর জন্য দায়ী। সংস্থাগুলো বলছে, বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ খাবার পানির সংকটের মধ্যে রয়েছে। ২৭০ কোটি মানুষ বছরে কমপক্ষে এক মাস পানির সংকটে ভোগেন। ২০১৪ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম ৫০০টি শহরের এক-চতুর্থাংশই এই অবস্থার মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে যোগানের তুলনায় পানির চাহিদা ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাববিস্তারকারী মানুষের নানাবিধ কর্মকান্ড এই সংকটের জন্য দায়ী। ২০১৫ সালে কেপটাউনের মতো অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হয় ব্রাজিলের বাণিজ্যিক রাজধানী ও জনবহুল শহর সাওপাওলো। সেখানে পানির প্রধান জলাধারে পানি চার শতাংশে নেমে এসেছে। শহরের ২১৭ লাখ বাসিন্দার জন্য ২০ দিনেরও কম পানির যোগান থাকে। শুধু তাই নয়, পানির লুটপাট ঠেকাতে পুলিশকে পানির ট্রাক পাহারাও দিতে হয়। যদিও দেশটি ২০১৪-২০১৭ সালে খরার প্রভাবকে দায়ী করছে। এদিকে, চীনের মতো ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে দূষিত পানির হার বেড়েই চলেছে। শহরটির খালগুলোর ৮৫ শতাংশ পানি কেবল চাষাবাদ ও শিল্প-কারখানার শীতলীকরণ কাজে ব্যবহৃত হয়। এমন কোনো খাল নেই, যার পানি গোসল কিংবা খাওয়ার উপযোগী। উদীয়মান প্রযুক্তি কেন্দ্র, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে পানির যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে। দিনে দিনে পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। সরকারি এক হিসাবে দেখা যায়, খাবার পানির অর্ধেকই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চীন হলো বিশ্বের ২০ শতাংশ পানি দূষণের জন্য দায়ী। অথচ এতে বিশুদ্ধ খাবার পানি রয়েছে মাত্র সাত শতাংশ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে উঠে এসেছে, ২০০০-২০০৯ সালের মধ্যে দেশে বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণ ১৩ শতাংশ কমে আসে। যেখানে প্রত্যেক মানুষের জন্য এক হাজার ঘন মিটার পানির একটি অনুপাত করেছিল বিশ্বব্যাংক; সেখানে ২০১৪ সালে তা নেমে দাঁড়ায় মানুষপ্রতি ১৪৫ ঘন মিটার। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বেইজিংয়ের ভূপৃষ্ঠের পানির ৪০ শতাংশ ছিল দূষিত। এর পেছনে শুধু চাষাবাদই নয়, শিল্পায়নও যথেষ্ট দায়ী। এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নীল নদকে কেন্দ্র করে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আধুনিককালে এসে সেই নদীকেও ভুগতে হচ্ছে দূষণের কারণে। মিসরের ৯৭ শতাংশ পানির উৎসই হলো এই নীল নদ। তবে অপরিশোধিত কৃষি ও আবাসিক বর্জ্য ফেলার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে নদীটি। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশটি বড় ধরনের বিশুদ্ধ পানি স্বল্পতার মুখে পড়বে বলে সতর্ক করছে জাতিসংঘ। বিশ্বের বিশুদ্ধ পানির এক-চতুর্থাংশ জলাধার রয়েছে রাশিয়ায়। তবে দেশটি এখন দূষণ সমস্যায় জর্জরিত। মূলত সোভিয়েত যুগের শিল্পায়নের উত্তরাধিকার হিসেবে এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। মস্কোর ৭০ শতাংশ পানির যোগান নির্ভর করে ভূ-পৃষ্ঠের পানির ওপর। দেশটির সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, মস্কোর মোট খাবার পানির ৩৫-৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। একই অবস্থা বিরাজ করছে আঙ্কারা, জাকার্তা, মেক্সিকো সিটি, লন্ডন, টোকিও ও যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতেও। তুরস্কের সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে মাথাপিছু খাবার পানির জোগান এক হাজার ৭০০ ঘন মিটার কমেছে। স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে। ইস্তাম্বুলের মতো দূষিত এলাকাগুলো শুষ্ক মৌসুমে পানি স্বল্পতায় ভুগতে শুরু করেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি