হুমকির মুখে ইংরেজি ভাষা!

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮, ১০:৫৪

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে শত কোটি মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। কিন্তু অনুবাদ প্রযুক্তির উন্নতি এবং ‘হাইব্রিড’ ভাষার বা ভাষার মিশ্রণের কারণে এর মযার্দা কি এখন হুমকির মুুখে পড়েছে? সত্যি কথা বলতে কি, বিষয়টি ঠিক তাই। যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন্ দেশ সবচেয়ে বেশি ইংরেজি ভাষীদের উৎসাহ যোগাচ্ছে? কিংবা কোন্ দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ইংরেজি ভাষা শিখছে? উত্তর হচ্ছে চীন। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ইউনিভাসিির্ট প্রেসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে (চীন) প্রায় ৩৫ কোটি (৩৫০ মিলিয়ন) মানুষের ইংরেজি সম্পকের্ অন্তত কিছু না কিছু জ্ঞান রয়েছে এবং এ রকম আরও কমপক্ষে ১০ কোটি (১০০ মিলিয়ন) মানুষ রয়েছে ভারতে। সম্ভবত চীনে আরও অনেক মানুষ রয়েছে, যারা সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ বা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজিতে কথা বলে। ‘দি ওয়াল্ডর্ ইকোনমিক ফোরাম’-এর তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে আনুমানিক এক দশমিক পঁাচ বিলিয়ন (১৫০ কোটি) মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। কিন্তু ৪০ কোটির কম মানুষের ফাস্টর্ ল্যাঙ্গুয়েজ বা প্রথম ভাষা এটি। ইংরেজি হলো বিশ্বের ফেভারিট লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কাÑ অথার্ৎ, যখন দুই দেশের দুই ভাষার মানুষকে এর ওপর নিভর্র করতে হয়। যেমন কোনো চীনা নাগরিক একজন ফরাসি নাগরিকের সঙ্গে আলাপে দুইজনই তাদের ফাস্টর্ ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করতে পারে না, তখন নিভর্র করে ইংরেজি ভাষার ওপরই। বছর-পঁাচেক আগেও সম্ভবত সেটাই ঘটতো। কিন্তু এখন আর সেটা হচ্ছে না। সে জন্য ‘ধন্যবাদ’ দিতে হবে কম্পিউটারে অনুবাদ এবং কণ্ঠ শনাক্তকরণ প্রযুক্তিকে। এর ফলে এখন দুই দেশের দুইজন নাগরিক নিজ নিজ দেশের ভাষাতেই কথা বলতে পারে এবং একে অন্যের সংলাপ মেশিনের অনুবাদের মাধ্যমে শুনতে পারে। সুতরাং বিশ্বের শীষর্ ভাষা হিসেবে ইংরেজির দিন সম্ভবত ফুরিয়ে আসছে। এখন অনলাইনে ইংরেজিতে লেখা যেকোনো আটিের্কল বা নিবন্ধ কম্পিউটার কিংবা ট্যাবলেটে কয়েকটি মাত্র ক্লিকেই জামার্ন কিংবা জাপানিজে রূপান্তর করে পড়া সম্ভব। তবে আন্তজাির্তক ব্যবসার প্রয়োজনে কিংবা ভিডিও গেমস খেলা ও সাম্প্রতিক বিশ্ব সংগীত শোনার ক্ষেত্রে ইংরেজি না জানলে সেটা কঠিন বিষয়। কিন্তু সবকিছু দ্রæত বদলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনির্য়ার স্ট্যানফোডর্ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিজ্ঞানী গবেষণা করে এমন একটি ট্রান্সলেশন (অনুবাদ) এবং ভয়েস (কণ্ঠ) শনাক্তকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সহায়তা করছেন, যার মাধ্যমে কাস্টমার সাভির্স হেল্প-লাইনে ফোন করলে মানুষ নাকি কম্পিউটার কথা বলছেÑ সেটা বোঝার সাধ্যি থাকবে না। কম্পিউটারে অনুবাদ প্রযুক্তি অদূর-ভবিষ্যতে মানব অনুবাদকদের মতোই ভালো কিংবা এর চেয়ে বেশি উন্নত হবে না, এর কোনো কারণ নেই। কিন্তু এটা কেবল একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয়। বহু মানুষ এই ভাষাকে তাদের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ভাষা হিসেবে নিচ্ছে, হাইব্রিড ধরনের ভাষাও ছড়িয়ে পড়ছে। কেবল ভারতেই হিংলিশ (হিন্দি ও ইংলিশের সংমিশ্রণ), বেংলিশ ( বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণ) এবং তাংলিশ (তামিল ও ইংলিশ ভাষার মিশ্রণ) তিন রকমের ভাষা নজরে পড়বে। ভাষা একজন মানুষের আত্ম-পরিচয়ের প্রকাশ। ইংরেজি ভাষাটি এখনো তার আধিপত্য ধরে রেখেছে বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিধর দুটি দেশের ভাষা হওয়ায়। একটি যুক্তরাষ্ট্র অপরটি যুক্তরাজ্য। কিন্তু এখন, বিশেষ করে চীনের অথৈর্নতিক সুপার পাওয়ার হিসেবে উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভাষাটি। আর খোদ যুক্তরাষ্ট্রতেই চায়নিজ ভাষা শেখার আগ্রহ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, স্কুল শিক্ষাথীের্দর চীনা ভাষা শেখার হার দুই বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। আর কলেজ পযাের্য় গত দশকে সেটা বেড়ে গেছে ৫০ শতাংশে। যদিও বিশ্বের অনেক এলাকায় ইংরেজি জানা এখনো সাফল্যের পথে পাসপোটর্ সমতুল্য বিবেচনা করা হয়। এরপরও আগামী কয়েক দশক ধরে এর বৈশ্বিক আধিপত্য হ্রাস পেতে পারে। অন্য সব ভাষার মতো এটিও ক্রমাগত পরিবতির্ত হচ্ছে এবং নতুন চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। যেমন কম্পিউটারে অনুবাদ প্রযুক্তি, হাইব্রিড ভাষার বিস্তার, চীনা ভাষার উত্থানÑ এসবই ইংরেজির জন্য বাস্তব চ্যালেঞ্জ হয়ে দঁাড়িয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ