পরমাণু বোমার বীভৎস অভিজ্ঞতা

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক সাত দশক আগে, ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে ‘লিটল বয়’ নামে পরমাণু বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে তাৎক্ষণিকভাবেই শহরের বেশিরভাগ অংশ মাটির সঙ্গে মিশে যায়, নিহত হয় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ। তিনদিন পর ৯ আগস্ট দেশটির অন্য একটি শহর নাগাসাকিতে অপর এক পরমাণু বোমার (ফ্যাট ম্যান) বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে নিহত হয় ৮০ হাজার মানুষ। যুদ্ধে পরমাণু বোমার ব্যবহারের ঘটনা এই দুইবারই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের শহর দুটিতে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণকে এখনো সমথর্ন করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ভাষ্যমতে, যুদ্ধ শেষ করতে না-কি এ ঘটনার প্রয়োজন ছিল! কিন্তু এমন ব্যাখ্যায় ভয়ঙ্কর এই মারণাস্ত্রের ব্যাপক গণবিধ্বংসী রূপকে সব সময় এড়িয়ে যেতেই দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেই নৃশংসতার শিকার বেঁচে যাওয়া মানুষদের চোখে কেমন ছিল পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতা? অনেকের মতে, গণবিধ্বংসী ওই হামলায় মৃতদের তুলনায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। পরমাণু হামলায় বেঁচে যাওয়া, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এমন জাপানিদের বলা হয় ‘হিবাকুশা’। জাপানের এমনই এক হিবাকুশা-ইয়াসুহিকো তাকেতা মিডল স্কুলে (হাই-স্কুলের সমতুল্য) যাচ্ছিলেন। ট্রেন স্টেশনে পেঁৗছার পর তিনি আকাশে উজ্জ্বল এক আলোর ঝলকানি দেখতে পান। তার ভাষ্যমতে, ‘ওই আলোর ঝলক ছিল সূযের্র চেয়েও উজ্জ্বল।’ এরপরই বিস্ফোরণের ভ‚-আন্দোলনের সঙ্গে তিনি উপলব্ধি করেন কানের পদার্ ফাটানো বিকট শব্দ। এতে আশপাশের সব কাচ তাৎক্ষণিক ভেঙে যায়। আকিকো তাকাকুরা নামে আরেক জাপানি বিস্ফোরণের আরও কাছে অবস্থান করছিলেন। তখনকার ২০ বছর বয়সী এই তরুণী বলেন, ‘আমার কপালে গরম লাগছিল। আমি অবচেতনভাবেই কপাল স্পশর্ করার সময় হঠাৎ হিরোশিমার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলামথ ছোট একটি জ্বলজ্বলে সাদা বস্তু নিচের দিকে পড়ছে, যা ক্রমেই বড় আগুনের বলে পরিণত হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, এটা আমাকে গিলে ফেলবে। পুরো হিরোশিমা তিনটি রঙে ছেয়ে গিয়েছিল। আমার যতদূর মনে পড়ে, চারদিকে ছিল শুধু লাল, কালো আর বাদামি রঙের ছটা। আর কিছুই মনে পড়ে না। রাস্তার ওপরের বহু মানুষ সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়। তাদের হাত থেকে হালকা ধূসর রঙের একটি তরল পদাথর্ বেয়ে পড়ছিল, যাতে পরবতীর্ সময়ে আগুন ধরে গেলে মৃতদেহগুলো পুড়ে যায়।’ বিস্ফোরণের পর বেঁচে যাওয়ার কাছাকাছি জায়গায় আশ্রয় নেয়ার পর বিচিত্র অনুভ‚তির মধ্যে প্রবেশ করেন। তাদের চুলগুলো পুড়ে যায়। আকিহিরো তাকাহাশির বয়স তখন ১৪। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল পুরো হিরোশিমাই যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আমি পরে উপলব্ধি করলাম, পরনের স্কুল-ড্রেসটি ছিড়ে ন্যাকড়ায় পরিণত হয়েছে। আমার মাথার পেছন, পিঠ, দুই হাত ও দুই পা পুড়ে যায়। গায়ের চামড়া উঠে যায়।’ হিরোশিমার এক হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক মিচিকো হাচিয়া বলেন, ‘মানুষগুলোকে দেখতে অলীক আবয়বের মনে হচ্ছিল। অনেকটা ভৌতিক পরিবেশের মতো। ব্যথায় কাতর হয়ে ছুটে বেড়ানো অনেককে দেখে কাকতাড়–য়ার মতোই মনে হচ্ছিল। অনেকের শুধু বাহু ছিল, কিন্তু হাত ছিল না। আবার অনেকের হাত ঝুলে পড়ছিল।’ বিস্ফোরণের সময় অনেকেই তাদের সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে চোখের পলকে হারিয়েছেন। সে সময়ের ২১ বছর বয়সী তরুণী এইকো তাওকা এক বছর বয়সী শিশুপুত্রকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। ভাঙা কাচের টুকরা মাথায় ঢুকলে শিশুটি তখনই মারা যায়। তাওকার শুধুই মনে হয়, রক্তাক্ত মুখমÐলের ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে কেবলই হাসছে! স্টিল ফ্যাক্টরির কমীর্ মিয়ো ওয়াতানাবি বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার পর যখন ছুটে বেড়াচ্ছিলেন, তখন এমন এক মৃত মাকে দেখতে পান, যার দুগ্ধপোষ্য শিশুটি তখনো মায়ের দুধ পান করে যাচ্ছিল। বেঁচে যাওয়া আহতদের চিকিৎসা যন্ত্রণারও এক বীভৎস বণর্না দিয়েছেন ওয়াতানাবি। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া মানুষগুলো পানির অভাবে চিৎকার করছিল। মাছির প্রাদুভাের্ব অনেকের শরীরে পচন ধরে গিয়েছিল। সে সময়কার ২৮ বছরের সেনা চিকিৎসক হিরোশি সোয়াচিকা বলেন, ‘অগ্নিদদ্ধ রোগী ছিল সবখানে। খুব কড়া একটা গন্ধ ছিল। বলতে দুঃখ হচ্ছে, মানুষগুলোর গন্ধ অনেকটা গ্রিলের পোড়া মাংসের মতোই ছিল।’ সংবাদসূত্র : বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট