সরকারবিরোধী বিক্ষোভ

দ্বিতীয় দিনেও ব্যাপক সহিংসতা ইরাকে

নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় বিশেষ বাহিনী সিটিএসকে রাস্তায় নামার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী মাহদির 'আমরা একত্রিত হয়েছি পুরো সরকারকে ছুড়ে ফেলার জন্য' মন্তব্য এক বিক্ষোভকারীর

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সরকারি বাহিনীর কাঁদানে গ্যাস আর বুলেট কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি বিক্ষুব্ধ ইরাকি বিক্ষোভকারীদের সামনে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদির সরকারের পদত্যাগের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো রোববারও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে তারা। এদিন বাগদাদের তাহ্‌রির স্কোয়ারে কাঁদানে গ্যাস উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা -রয়টার্স
ইরাকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ নতুন করে শুরু হওয়ার পর দুই দিনের সহিংসতায় অন্তত ৬৭ ইরাকি নিহত হয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদির সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর শনিবারও রাজধানী বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এদিকে, প্রায় মাসখানেক ধরে চলা সরকার-বিরোধী এই বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে আট হাজার মানুষ। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি সহিংসতা অব্যাহত থাকায় শনিবার রাতে দেশটির অভিজাত কাউন্টার-টেরোরিজম সার্ভিসের (সিটিএস) সদস্যদের বাগদাদ ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নাসিরিয়ায় রাস্তায় নামার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহদি। প্রতিবাদ থামাতে তাদের 'প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার' নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে। প্রায় মধ্যরাতে সিটিএসের সেনারা বাগদাদের কেন্দ্রস্থল তাহ্‌রির স্কোয়ারের আশপাশের এলাকার চেক পয়েন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে এবং প্রতিবাদকারীদের তাহ্‌রির স্কোয়ার থেকে বের করার চেষ্টা চালায়। এর আগে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো বারবার কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেও বিক্ষোভকারীদের স্কোয়ারটি থেকে সরাতে পারেনি। নাসিরিয়ায় সিটিএসের সেনারা লাঠিপেটা করে ও বহু প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে বলে পুলিশ ও নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে। দেশটির এলিট এই বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, বিক্ষোভ এবং বিক্ষোভকারীদের মাঝে যাতে সুযোগসন্ধানীরা অনুপ্রবেশ না করতে পারে, সেজন্য কাউন্টার টেরোরিজম সার্ভিসের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভের সময় অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনার সুরক্ষায় কাজ করছে কাউন্টার টেরোরিজম সার্ভিস। এই দুই শহরে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসে। বছরের পর বছর ধরে সংঘর্ষ ও কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার পর দুই বছর ধরে চলা স্থিতিশীলতার পরও তাদের জীবনমানের উন্নয়ন না হওয়ায় রাজনৈতিক অভিজাতদের নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন ইরাকিরা। নিজেদের ক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নেমে আসার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তারা। এদিন বাগদাদে নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার সরাসরি মাথায় আঘাত করার পর চার বিক্ষোভকারী নিহত ও আরও বহু আহত হন। নাসিরিয়ায় স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তার বাড়িতে হামলার সময় রক্ষীদের গুলিতে আরও চার বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। হামলাকারীরা ওই বাড়িতে আগুন দেয়ার সময় রক্ষীরা গুলি করে। আরেক শহর হিলস্নায় সাত বিক্ষোভকারী নিহত হন। ইরান-সমর্থিত বদর সংগঠনের দপ্তরের কাছে বিক্ষোভকারীরা সমবেত হলে সংগঠনটির মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করলে বেশ কয়েকজন নিহত হন। ইরাকি পতাকা মাথায় জড়িয়ে একজন বিক্ষোভকারী বলেন, 'আমরা এখানে এসেছি পুরো সরকারকে টেনে নামানোর জন্য, ছুড়ে ফেলার জন্য।' তিনি বলেন, 'আমরা তাদের একজনকেও আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না। আর সেটা পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ হালবুসি কিংবা প্রধানমন্ত্রী আবদেল মাহদি যেই হোক না কেন। আমরা পুরো শাসন ব্যবস্থার শেষ চাই। গত শুক্রবার ইরাকজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় অন্তত ৫২ জন নিহত এবং দুই হাজারের বেশি লোক আহত হন। এর আগে চলতি মাসের প্রথমদিকে কয়েকদিন ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষে ১৫৭ জন নিহত ও ছয় হাজারের বেশি লোক আহত হয়েছিলেন। উলেস্নখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মসংস্থানের সংকট, নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাগদাদের রাজপথে নামেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের অনুসারী না হয়েও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আওয়াজ নিয়ে রাজপথে নামেন আন্দোলনকারীরা। নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালিয়ে তাদের ওপর চড়াও হলে এই বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে, ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন শহরে। এর আগে গত ২২ অক্টোবর এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারি বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও গুলিবর্ষণের ফলে ১৪৯ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। একই মত জাতিসংঘেরও।