ইরাকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ

কারবালায় ইরানি কনসু্যলেটে হামলা

বিক্ষোভকারীদের হটাতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি, নিহত ৩। কয়েক সপ্তাহে নিহতের সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়েছে বাগদাদ অবরুদ্ধ, বসরার কাছে বন্দরগামী সব সড়কও বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কারবালার রাস্তায় টায়ার জ্বালায় বিক্ষোভকারীরা
ইরাকের শিয়া অধু্যষিত নগরী কারবালায় অবস্থিত ইরানের কনসু্যলেট ভবনে রোববার রাতে হামলা করেছে দেশটির বিক্ষোভকারীরা। এতে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদির সতর্কতা উপেক্ষা করেই সোমবারের বিক্ষোভেও অংশ নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীরা আগের দিন বাগদাদের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে কার্যত নগরীটি অচল করে দেয়। রোববার বিক্ষোভকারীরা বাগদাদের প্রধান সড়কগুলো বন্ধ করে দিয়ে রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এদিন শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের সামনের সড়কে বসে পড়ে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভের কারণে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার সরকারি অফিস-আদালতও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা রোববার ইট-পাটকেল দিয়ে ইরানের কনসু্যলেট ভবনে হামলা শুরু করে। তারা সেখানে ইরাকের পতাকা উড়িয়ে 'কারবালা মুক্ত, ইরান চলে যাও, যাও' এ রকম স্স্নোগানে দেয়ালচিত্র আঁকে। ইরাকের রাজনীতিতে তেহরানের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এ অবস্থান বিক্ষোভকারীদের। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছোড়া শুরু করে। রাজধানী বাগদাদের দক্ষিণে অবস্থিত কারাবালার রাস্তার একধার থেকে বিক্ষোভকারীরা ইরানের কনসু্যলেট ভবন লক্ষ্য করে পাথর ও জ্বলন্ত টায়ার ছুড়ে মারে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করলে তাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া ও গুলি করা শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। কাঁদানে গ্যাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাস্ক পরিহিত এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'তারা (নিরাপত্তাবাহিনী) আকাশের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিল না, তারা আমাদের মেরে ফেলার জন্যই গুলি করছিল। এটাকে বৈধতা দিতে বিক্ষুব্ধ মানুষকে ছত্রভঙ্গ করার অজুহাত দিচ্ছে।' উলেস্নখ্য, সরকারি হিসাবেই ইরাকে বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ২৫০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে আট হাজারের বেশি মানুষ। এসব হতাহতের ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণকেই দায়ী করছে ইরাকের মানবাধিকার সংস্থা। ইরাকি 'অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস'র পরিচালক মুস্তাফা সাদুন সোমবার বলেন, রাতজুড়ে তিনজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশটির মেডিকেল বিভাগের সূত্রও তিনজনের মৃতু্যর কথা নিশ্চিত করেছে। ইরাকের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, হামলার পর কনসু্যলেটের নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে এই কূটনৈতিক মিশনের চারপাশে চার ব্যাটালিয়ন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বাগদাদে ২৫ বছরের এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ লোকজন এবং চোরদের লাথি মেরে বের করে দেয়া না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সরকারকে কঠিন সতর্কবার্তা দিতে চাই। শুধুমাত্র জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের আমরা তাদের কার্যালয়ে যেতে দেব না।' আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, 'আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে না সৌদি আরব, না তুরস্ক, না ইরান, না যুক্তরাষ্ট্র, কারও হস্তক্ষেপ চাই না। এটি আমাদের দেশ, আমাদের দাবিগুলো পরিষ্কার।' বিক্ষোভকারীদের অনেকেই এখন ইরাকের রাজনৈতিক শ্রেণিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের আজ্ঞাবহ বলে মনে করছে। সে কারণে ইরাকে বিদেশি হস্তক্ষেপ অবসানেরও দাবি জানাচ্ছে। বাগদাদের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুট নগরীতেও একই ধরনের বিক্ষোভ হচ্ছে। রোববার আরও দক্ষিণের বহু শহর এবং নগরীতে সরকারি কার্যালয় এবং স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। তেলসমৃদ্ধ নগরী বসরার কাছে প্রধান উপসাগরীয় বন্দর উম্মে কাসারগামী সব সড়কও বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এর ফলে গত বুধবার থেকে বন্দরের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এদিকে, বিক্ষোভ থামাতে অক্টোবরের শেষদিকে স্থানীয় প্রশাসন বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ওই কারফিউ ভেঙে সড়কে নেমে এসে বাগদাদকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। উলেস্নখ্য, গত ১ অক্টোবর থেকে রাজধানী বাগদাদসহ মূলত দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শিয়া অধু্যষিত প্রদেশগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা দেশটিতে বিদ্যমান রাজনৈতিক পদ্ধতি ও সরকারের বিরুদ্ধে স্স্নোগান দিয়ে তাদের জীবন-মান উন্নয়নের দাবি জানাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নাজুক সরকার ব্যবস্থা, প্রশাসনে দুর্নীতি ও অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য ইরাকের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে।