প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

জলবায়ু চুক্তিতে থাকছেই না যুক্তরাষ্ট্র

জাতিসংঘকে চিঠি দিয়ে নিজেদের মনোভাবের কথা জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত কার্যকর হবে অন্য দেশগুলোর নিন্দা প্রকাশ

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে থাকছেই না যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘকে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, 'জাতিসংঘকে চিঠি দিয়ে নিজেদের মনোভাবের কথা জানিয়ে দিয়েছে তাদের প্রশাসন।' এর মাধ্যমে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যেতে এক বছর মেয়াদি প্রক্রিয়া শুরু হলো। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে। ওয়াশিংটনের এই ঘোষণার ফলে অন্যান্য দেশগুলো নিন্দা প্রকাশ করে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স শিল্পোন্নত দুনিয়ার কার্বন মচ্ছবের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে ২০১৫ সালে প্যারিসে এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ১৮৮টি দেশ। চুক্তিতে আরও কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে 'ভাঁওতাবাজি' আখ্যা দিয়ে আসছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচিত হয়ে ২০১৭ সালের ১ জুন এই চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন তিনি। গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার বিস্তারিত পরিকল্পনা ঘোষণা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ওই সময় তিনি দাবি করেন, চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর 'অন্যায্য অর্থনৈতিক বোঝা' চাপিয়েছে। ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত হয় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি। জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী, এই সময় থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে কোনো দেশ চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করতে পারবে না। এরপরে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে যেতে হলেও এক বছর অপেক্ষাকাল (ওয়েটিং পিরিয়ড) পার করতে হবে। সোমবার ওই সময়সীমা পার হওয়ার প্রথম দিনেই প্রথম দেশ হিসেবে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র। এদিন এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, 'প্যারিস চুক্তি থেকে সরে গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে আমরা বৈশ্বিক সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকব।' ট্রাম্প প্রশাসন প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিলেও তা কার্যকর হতে এক বছর সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। আর ওই নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলে নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে এই সিদ্ধান্ত বদলানোর সুযোগ থাকবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন শিল্পের ওপর লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানোর লক্ষ্যে বিস্তৃত একটি কৌশল প্রণয়ন করেছেন। ওই কৌশলের অংশ হিসেবেই প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপ নিল যখন বৈশ্বিক উষ্ণতার সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব এড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীরা ও বিশ্বের বহু সরকার দ্রম্নত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ তেল ও গ্যাস উৎপাদক যুক্তরাষ্ট্রই ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী। পাকাপাকিভাবে বের হয়ে যাওয়ার পর প্যারিস চুক্তির বাইরে থাকা একমাত্র দেশ হবে তারা। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি করলেও যুক্তরাষ্ট্র গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে এনেছে। গোটা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার খবরে নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশ, পরিবেশবাদী, বিজ্ঞানী ও জলবায়ু আন্দোলনকর্মীরা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।' দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ চীন সফরে যাচ্ছেন আজ। বেইজিংয়ে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে 'প্যারিস চুক্তিকে অপরিবর্তনীয়' বলে যৌথ বিবৃতি দেবেন বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এছাড়া মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন।