দাতব্য সংস্থার অর্থ নয়ছয়

ট্রাম্পকে ২০ লাখ ডলার জরিমানা

তহবিলের অর্থ নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়াও দেনা পরিশোধ ও চিত্রকর্ম কিনতে ব্যয় করেছেন তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী দৌড়ে নিউইয়র্কের ধনকুবের বস্নুমবার্গ

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
২০১৬ সালে এক লাখ ডলার অনুদান নেন ট্রাম্প
দাতব্য সংস্থার অর্থ নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যয় করার অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২০ লাখ ডলার (১৬ কোটি টাকা) জরিমানা করেছে নিউইয়র্কের একটি আদালত। বৃহস্পতিবার দেয়া রায়ে বিচারক স্যালিয়ান স্কারপুলা জরিমানার এই অর্থ এমন ৮টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন, যেগুলোর সঙ্গে ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্বার্থে তার নামের ওই দাতব্য সংস্থাটি ব্যবহৃত হতো- কৌঁসুলিদের এমন অভিযোগের পর ২০১৮ সালে 'দ্য ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ফাউন্ডেশন'টি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। স্কারপুলা তার রায়ে ট্রাম্প এবং তার তিন সন্তান কর্তৃক পরিচালিত এ দাতব্য প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন। নিউইয়র্কের এ বিচারক বলেন, 'দুস্থদের জন্য তোলা অর্থ ২০১৬ সালের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী প্রচারণায় খরচ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট 'জিম্মাদারের দায়িত্ব লঙ্ঘন' করেছেন। ট্রাম্পকে জরিমানার পাশাপাশি ফাউন্ডেশনটির বাকি তিন পরিচালক ডোনাল্ড জুনিয়র, এরিক ও ইভাঙ্কাকে 'দাতব্য সংস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও পরিচালকদের' কাছ থেকে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণও নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেতিসিয়া জেমস। এর আগে 'ওয়াশিংটন পোস্ট'র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কর রেয়াত পাওয়া এই ফাউন্ডেশনের অর্থ ট্রাম্পের ব্যবসার দেনা পরিশোধ, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রচারণায় এবং চিত্রকর্ম কিনতে ব্যয় করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেতিতা জেমস ওই বছরই মামলা করেন। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছিলেন, দাতব্য সংস্থাটি সঠিকভাবেই পরিচালনা করা হয়েছে, কারো স্বার্থে নয়। নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থার অর্থ অপব্যবহারের মামলাটি নিয়ে ট্রাম্প শুরু থেকেই ত্যক্ত বিরক্ত। 'নিউইয়র্কের ধুরন্ধর ডেমোক্রেটরা আমাকে ফাঁসানোর জন্য সবকিছুই করছে' বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। ট্রাম্পের আইনজীবীরাও ২০১৮ সালের জুনে নিউইয়র্কের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বারবারা আন্ডারউডের করা এ মামলাকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী দৌড়ে ধনকুবের মাইকেল বস্নুমবার্গ এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নামতে যাচ্ছেন দেশটির ধনকুবের ব্যবসায়ী মাইকেল বস্নুমবার্গ। এই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে যারা প্রার্থী হওয়ার আবেদন করেছেন, তাদের কেউই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে 'লড়াইয়ে জেতার মতো যথেষ্ট শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন' এই উদ্বেগ থেকেই নিউইয়র্কের সাবেক এই মেয়র ভোটের লড়াইয়ে নামার কথা বিশেষভাবে ভাবছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র। ওই মুখপাত্র বলেন, 'এখন আমাদের সব কাজ গুছিয়ে নেয়া প্রয়োজন, যেন আমরা ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত করতে পারি। বস্নুমবার্গের ধারণা, এখন পর্যন্ত যে কজন ডেমোক্রেট প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের কারো অবস্থানই ট্রাম্পকে হারানোর জন্য যথেষ্ট নয় এবং এটা নিয়ে তার উদ্বেগ বাড়ছে।' ৭৭ বছরের বস্নুমবার্গ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক প্রার্থী বাছাইয়ে লড়াইয়ে নামতে চলতি সপ্তাহে আলাবামায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে পারেন বলেও জানান তিনি। গণমাধ্যমের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত মোট ১৭ জন প্রার্থী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সম্ভাব্য ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন। তবে সম্প্রতি কয়েকটি জনমত জরিপে দেখা গেছে 'বামপন্থি' বাইডেনের মতো ওয়ারেন এবং স্যান্ডার্স দলীয় মনোনয়ন পেলেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মূল ভোটের লড়াইয়ে হেরে যাবেন। ওয়াল স্ট্রিটের এক সময়ের ব্যাংকার বস্নুমবার্গ পরে নিজের নামে মিডিয়া সম্রাজ্য গড়ে তোলেন। মানবহিতৈষী হিসেবেও সুপরিচিত বস্নুমবার্গ শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো খাতগুলোতে প্রতিবছর লাখ লাখ ডলার দান করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক উপদেষ্টা গ্রম্নপ 'এভরিটাউন ফর গান সেফটি'র প্রধান তহবিল দাতা বস্নুমবার্গ। তার সহায়তায় ২০১৪ সালে ওই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেও ২০০১ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে নিউইয়র্কের মেয়র পদে ভোটে জেতেন। তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা মেয়র ছিলেন। তবে গত বছর তিনি আবার ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন।