অযোধ্যার রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

রায়কে স্বাগত জানিয়ে সম্প্রীতি বজায়ের আহ্বান কংগ্রেসের মুসলমানদের খয়রাতি জমির দরকার নেই : ওয়াইসি রায়ে বিজেপির ধর্মান্ধ আদর্শের প্রতিফলন ঘটেছে : কুরেশি

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শনিবার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলার রায় ঘোষণা দেয়ার পরপরই উলস্নাস প্রকাশ করেন অনেকে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে রাম ভক্ত চা বিক্রেতা, সবার জন্য এ যেন এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। রায় ঘোষণার পর রাজধানী দিলিস্নতে আদালত চত্বরের বাইরে আরাধ্য দেবতা রামের পতাকা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন রামমন্দির নির্মাণের পক্ষের লোকজন -আউটলুক ইনডিয়া
ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলার রায় শনিবার ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এই রায় নিয়ে এরই মধ্যে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্ষমতাসীন বিজেপি ও প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও মুসলমান নেতাদের মধ্যে দেখা গেছে তীব্র অসন্তোষ। এদিকে, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও এই রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, ডন অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে 'ঐতিহাসিক' উলেস্নখ করে স্বাগত জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা। এ নিয়ে দলটির তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা সবাই একই সুরে কথা বলেছেন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং এই মামলার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'অযোধ্যা সংক্রান্ত রায় ঐতিহাসিক। এই রায় ভারতের সামাজিক বন্ধনকে আরও জোরালো করবে। সবাইকে ন্যায়সম্মত পথে ও উদারতার সঙ্গে রায়টি গ্রহণ করার অনুরোধ করছি।' ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, 'আমি রামের জন্মভূমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই সিদ্ধান্তটি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে গ্রহণ করার এবং শান্তি-সম্প্রীতিতে পরিপূর্ণ এক শ্রেষ্ঠ ভারত বিষয়ে আমাদের সংকল্পে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার জন্য আবেদন করছি।' কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি বলেন, 'প্রত্যেকের এই রায় মেনে নেয়া উচিত এবং শান্তি বজায় রাখা উচিত।' বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের রায়কে প্রত্যেকের স্বাগত জানানো উচিত। এরপর এই ইসু্যতে আর বিতর্ক থাকা উচিত নয়। এটাই আমি প্রত্যেকের কাছে আবেদন করতে চাই।' রায়কে স্বাগত জানিয়ে সম্প্রীতি বজায়ের আহ্বান কংগ্রেসের এদিকে, ক্ষমতাসীনদের মতো অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেসও। রায় মেনে নিয়ে সবাইকে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সর্বপ্রাচীন এই দলটি। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস জানায়, 'আমরা অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান করি। আমরা আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ ও ভ্রাতৃত্বের চেতনা মেনে চলতে এবং শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ও সব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। যুগে যুগে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ঐক্য আমাদের সমাজকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, তা পুনরায় নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের।' মুসলমানদের খয়রাতি জমির দরকার নেই : ওয়াইসি অন্যদিকে, অল ইনডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা ও লোকসভার এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বাবরি মসজিদ মামলার রায়ের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, 'মুসলমানদের খয়রাতির পাঁচ একর জমির প্রয়োজন নেই। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তার মন্তব্য, 'এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ কিন্তু একেবারে অব্যর্থ না। সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আমরা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করছি। আমাদের পাঁচ একর খয়রাতি জমি প্রয়োজন নাই। পাঁচ একর জমির প্রস্তাব আমাদের প্রত্যাখ্যান করা উচিত।' প্রতিক্রিয়ায় ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসেরও সমালোচনা করেছেন ওয়াইসি। তিনি বলেন, 'কংগ্রেস নিজের আসল রূপ দেখিয়েছে। কংগ্রেস যদি তাদের দায়িত্ব পালন করত এবং নরসিমা রাওকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিত, তাহলে এখনো সেখানে মসজিদ থাকত?' রায়ে বিজেপির ধর্মান্ধ আদর্শের প্রতিফলন ঘটেছে : কুরেশি ভারতের ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায়কে নিয়ে ভারতের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সম্পূর্ণ বিষয়টিকে 'অসংবেদনশীল' বলে জানিয়েছেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কুরেশি। তিনি বলেন, 'বাবরি মসজিদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির ধর্মান্ধ আদর্শের প্রতিফলন ঘটেছে।' পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ভারতে এখনো মুসলমানরা অনেক চাপের মধ্যে বাস করছেন। আর দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত ভারতে বাস করা মুসলমানদের আরও চাপের মধ্যে ফেলে দেবে।' ভারত-পাকিস্তানের কর্তারপুর করিডর ঘিরে যখন আনন্দময় পরিবেশ, তখনই আলোচিত এই মামলার রায় দানের বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না ইমরান খানের সরকার। কুরেশি বলেন, 'কেন এই সময়টিকেই বেছে নেয়া হলো। পুরো বিষয়টি খুবই অসংবেদশীল।'