স্বাধীনতাপন্থিদের আন্দোলন

রক্তাক্ত হংকংয়ে বাড়ছে বিক্ষোভ

বিক্ষোভকারীরা দাবি আদায়ে সফল হবে না, হুঁশিয়ারি ক্যারি লামের পুলিশের গুলিতে নিহত ১

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
এক বিক্ষোভকারীকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি
রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, ছুরি হামলা, গুলি-বিক্ষোভ প্রতিনিয়তই বাড়ছে হংকংয়ে। রক্তাক্ত হচ্ছে প্রতিদিন। সোমবার বিক্ষোভকারীদের ওপর ফের গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এদিন সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের হাতে অন্তত চার বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এরমধ্যে ১ জন মারাগেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ-সংঘর্ষের পর অন্তত দুইজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি লাইভ ফুটেজে দেখা গেছে, সড়ক অবরোধ করা একজনের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে পুলিশ। এ সময় মুখ ঢেকে রাখা আরেক বিক্ষোভকারী এগিয়ে এলে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গুলি করেন। এরপরও ধ্বস্তাধ্বস্তি চলার মধ্যে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও দুটি গুলি করেন। ওই গুলি কোথায় লেগেছে, ফুটেজে তা পরিষ্কার বোঝা যায়নি। তবে গুলির পর ফুটেজে ২১ বছর বয়সের এক বিক্ষোভকারীকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তার চোখ খোলা ছিল। চারপাশে ছিল রক্ত। একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানান, 'ওই ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর ছিলো। পরে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়।' গত জুনে হংকংয়ে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো পুলিশ কাউকে সরাসরি গুলি করেছে। এর আগে গত ১ অক্টোবর চীনে কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তির দিন এক তরুণ বিক্ষোভকারীকে গুলি করেছিল পুলিশ। এরপর ৪ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর আহত হয়েছিল। আর সোমবার সকালে সর্বশেষ গুলির ঘটনাটি ঘটল। ওই ঘটনা ছাড়াও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বচসার পর এক বেইজিংপন্থি সমর্থকের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ফুটেজটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মারাত্মকভাবে দগ্ধ এক ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা জানিয়েছে এবং বলেছে, 'তার অবস্থা গুরুতর'। এক সময়কার ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং এখন চীনের অংশ। 'এক দেশ, দুই নীতি'র অধীনে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে হংকং। অঞ্চলটির নিজস্ব বিচার ও আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূল চীনের চেয়ে ভিন্ন। গত ৯ জুন থেকে সেখানে কথিত 'অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল' বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, ওই বিল অনুমোদন করা হলে ভিন্নমতাবলম্বীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে এক পর্যায়ে ওই বিলকে 'মৃত' বলে ঘোষণা দেন হংকংয়ের চীনপন্থি শাসক ক্যারি লাম। তবে এতে আশ্বস্ত হতে না পেরে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে সেখানকার নাগরিকরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হংকংয়ের স্বাধীনতার দাবি। টানা বিক্ষোভের মুখে ওই বিল প্রথমে 'মৃত' এবং পরে বাতিল ঘোষণা করা হলেও আন্দোলন থামেনি। বরং গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের আরও অনেক দাবি নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে হংকংয়ের নেতা ক্যারি লাম সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ার করে বলেন, 'তারা দাবি আদায়ে সফল হবে না।' তিনি আরও বলেন, 'হংকংয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সহিংসতার অবসান ঘটানোর পথ বের করতে আমরা সব রকম চেষ্টা করে যাব।' গত ৮ নভেম্বর হংকংয়ে বিক্ষোভ চলাকালে আহত এক শিক্ষার্থীর মৃতু্যতে অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থিদের চীনবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র রূপ নেয়। ৪ নভেম্বর বিক্ষোভে পুলিশের অভিযানকালে গুরুতর আহত হন অ্যালেক্স চো নামের ওই শিক্ষার্থী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৮ নভেম্বর তার মৃতু্য হয়। এ ঘটনায় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে হংকং শহরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের এ আহ্বানকে সমর্থন করেছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। চৌ'র মৃতু্যতে চলমান আন্দোলনে তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সংকট আরও গভীর হচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের নেতা জসুয়া ওয়াং টুইট বার্তায় লিখেছেন, 'হংকংয়ের একজন স্বাধীনতাপন্থি বিক্ষোভকারীকে হারিয়ে আমরা শোকাহত। আমরা আর পেছনে ফিরব না। আমরা যখন ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছি, তখন একসঙ্গে শেষ করব।'