শেষ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির শাসন :আপত্তি বিরোধীদের

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের মুম্বাইয়ে যখন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি-এনসিপির নেতা শারদ পাওয়ার, আর দিলিস্নতে সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করছিলেন, আর শিবসেনা যখন অপেক্ষা করছে, কোনোভাবে সরকারে যাওয়ার, ঠিক তখনই মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়েছে। এর আগে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেন। রাজভবনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাও রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে সম্মতি দেয়। তারপরই রাজ্যটিতে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করে বিজ্ঞপ্তিতে সই করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ এ নিয়ে এরই মধ্যে তীব্র আপত্তি তুলেছে ভারতের বিরোধী দলগুলো। এনসিপিকে দেয়া নির্ধারিত সময়সীমার (স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টা) আগেই কীভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার সুপারিশ করলেন রাজ্যপাল ভগৎ সিং, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। নিন্দা করেছে বাম দলগুলোও। ভারতের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, কোনো নিয়ম-নীতি না মেনে সরাসরি ভারতীয় গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হেনেছে মোদি সরকার। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পরপরই এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেস নেতা তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তিনি বলেন, 'রাজ্যপালের আরও সময় দেয়া উচিত ছিল। নিশ্চয় কারও উদ্দেশ্য সাধন করতেই রাজ্যপাল এই তাড়াহুড়ো করেছেন।' সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'এনসিপির শারদ পাওয়ারকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। তা অতিক্রম হওয়ার আগে কীভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করলেন তিনি? এটা সংবিধানকে হত্যা। ভারতীয় গণতন্ত্রের ওপর তীব্র আঘাত হেনেছে মোদি সরকার। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার নীতি, নিয়ম মানছে না তারা। এর আগে জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, গোয়া, মণিপুর এবং আরও অনেক রাজ্যে বারবার একই ঘটনা ঘটতে দেখেছি আমরা।' এদিকে, সরকার গঠনের জন্য মাত্র একদিন সময় দেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিবসেনা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালেই দেশটির সুপ্রিম কোর্টে এ সংক্রান্ত আবেদন দাখিল করেছে তারা। তাতে তাদের তিনদিন সময় দেয়ার আবেদনে জানানো হয়। গত ২৪ অক্টোবর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়। তারপর ভোটের আগে জোট না করেও হরিয়ানায় সরকার গঠন করতে সমর্থ হয় বিজেপি। কিন্তু, মহারাষ্ট্রে ভোটের আগে জোট গড়লেও ফলের পর বদলে যায় চিত্র। দুটি দল থেকেই আড়াই বছর করে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে সরব হয়ে ওঠে শিবসেনা। যা মানতে রাজি হয়নি বিজেপি। এর জেরে এনসিপি ও কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু, তাও ফলপ্রসূ হয়নি। সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যপাল কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করেন উদ্ভবপুত্র আদিত্য ঠাকরে। কিন্তু, সরকার গঠনের জন্য শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেস রয়েছে কিনা, তার চিঠি দেখাতে পারেননি আদিত্য। এরপর ফলের নিরিখে তৃতীয় বৃহত্তম দল এনসিপিকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানান রাজ্যপাল। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে তাদের সরকার গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে হবে বলে উলেস্নখ করেন। রাজ্যপালের ডাক পেয়ে সরকার গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু করে এনসিপি। মঙ্গলবার সকাল হতেই মুম্বাইয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার। দিলিস্নতে বৈঠকে বসেন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীও। আর এর মধ্যেই মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করে দেন রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। কয়েকদিন আগেই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিসের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সুধীর মুনগন্তিওয়ার বলেছিলেন, ৮ নভেম্বরের মধ্যে সরকার গঠন না হলে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে। বলা হয়, মুঘলদের মতোই সবাইকে দমিয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। নাম না করে দেবেন্দ্র ফড়নবিসকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, কেউ কেউ মনে করছেন তারা যেন সারাজীবন অন্যদের শাসন করার জন্যই জন্মেছেন। মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির শাসনের বিষয়ে রাজ্যপালের সুপারিশের কথা শোনার পরই ওই নেতার হুশিয়ারি সত্যি হলো বলে অভিযোগ করছে বিজেপি বিরোধীরা।