নিহত ৮ জন

ফিলিস্তিন-ইসরাইল পাল্টাপাল্টি হামলায় রণক্ষেত্র গাজা

ইসলামিক জিহাদের শীর্ষ নেতা হত্যাকে কেন্দ্র করে এ উত্তেজনা নতুন করে শুরু হওয়া এ সংঘাত থামানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘ

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ধ্বংসস্তুপ থেকে জামাকাপড় উদ্ধার করছেন এক ফিলিস্তিনি বালক
যাযাদি ডেস্ক ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী ইসলামিক জিহাদের এক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর দুই দেশের পাল্টাপাল্টি রকেট হামলায় গাজা উপত্যকা ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার সারাদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলার জবাবে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে আট ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি এদিকে, গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বুধবার সকালে ইসরাইলে রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে সাইরেনের সতর্ক সংকেত বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইলিরা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে জড়ো হয়। তবে রকেট হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের শীর্ষ কমান্ডার বাহা আবু আল-আত্তা মঙ্গলবার ভোররাতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ও শিন বেত সিকিউরিটি সার্ভিসের যৌথ আভিযানে নিহত হন। ওই হামলায় আত্তার স্ত্রীও নিহত হন। ইসলামিক জিহাদের এক কর্মকর্তার দামেস্কের বাড়িতে পৃথক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই কর্মকর্তারা ছেলেসহ দুইজন নিহত হন। এ হামলার জন্য সিরিয়া ইসরাইলকে দায়ী করে, কিন্তু ইসরাইল কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। এরপরই ইসরাইল ও গাজার মধ্যে গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র লড়াই শুরু হয়। সারাদিন ধরে ইসরাইলে প্রায় ২০০ রকেট নিক্ষেপ করে ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা। ইসরাইলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ২০টির মতো রকেট প্রতিরোধ করে। গাজা থেকে ছুটে আসা রকেটে প্রায় ২৫ জন ইসরাইলি জখম হন। কিছু রকেট ইসরাইলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত তেল আবিব শহরে গিয়েও পড়ে। জবাবে ইসরাইলও গাজায় ইসলামিক জিহাদের অবস্থানগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে আট ফিলিস্তিনি নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে শঙ্কায় রকেট হামলার আওতায় থাকা এলাকাগুলোর স্কুল বন্ধ রেখেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় নয় এমন সব ধরনের কাজও বাতিল করেছে তারা। সারা দিন ধরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরাইল গাজার শাসক দল হামাসের কোনো লক্ষ্যে হামলা করেনি। চলতি লড়াই থেকে হামাসকে দূরে রাখতেই ইসরাইল এ কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদপত্র হারেৎজ। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাসের কোনো অবস্থানে হামলা হলে আর তাতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে গোষ্ঠীটি এ লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়বে, কিন্তু চলতি লড়াইয়ে হামাসকে জড়ানোর কোনো আগ্রহ তাদের নেই। এ সংঘাতে হামাস জড়িয়ে পড়লে লড়াইয়ের চরিত্র উলেস্নখযোগ্যভাবে পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ তাদের সামরিক সামর্থ্য ইসলামিক জিহাদের চেয়ে অনেক বেশি। শেষ খবরও পাওয়া পর্যন্ত হামাসও নিজেদের এ সংঘাত থেকে দূরে রেখেছে। নতুন করে শুরু হওয়া এ সংঘাত থামানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘ। এ লক্ষ্যে বিশ্ব সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত মিসরের রাজধানী কায়রোর পথে রওনা হয়েছেন বলে কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে। এদিকে গাজার ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইল সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে আর তাদের পরিণাম ভোগ করতে হবে। দেশটি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দাবি করেছেন ইসলামিক জিহাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খালেদ আল বাতশ। আবু আল আতার জানাজার সময়ে তিনি ইসরাইলকে উদ্দেশ করে বলেন, এই নেতার মৃতু্যর প্রতিশোধ এমনভাবে নেয়া হবে যাতে জায়নবাদি রাষ্ট্রটি কেঁপে উঠবে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তার দেশ উত্তেজনা চায় না। তবে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যারা আমাদের নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করবে তারা ভুল করবে। আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি সন্ত্রাসীদের আস্তানা যেখানে হোক আমরা সেখানে হামলা চালাতে পারি। যারা আমাদের ক্ষতি করবে আমরাও তাদের জবাব দেব। প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল। পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে অবৈধভাবে নির্মিত বসতিতে লাখ লাখ ইসরাইলি বসবাস করে। তারপরও দখলদারিত্ব সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনতার প্রতিরোধকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করে তেল আবিব।