বলিভিয়া সংকট

আমাকে ছাড়া নির্বাচন হলেও সমস্যা নেই :মোরালেস

মোরালেসের সমর্থকদের ওপর পুলিশের গুলি, নিহত ৫

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইভো মোরালেস
মেক্সিকোয় নির্বাসিত বলিভিয়ার ক্ষমতাচু্যত প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে, তাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হলেও তাতে তার কোনো সমস্যা নেই।' বামপন্থি এ নেতার এমন অবস্থান দেশটিতে জেনিন আনেজের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ও মোরালেসের 'মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম' (এমএএস) দলের মধ্যে বিরোধ মেটাতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদসূত্র: রয়টার্স বিতর্কিত এক নির্বাচনের ফল নিয়ে বিক্ষোভ-সহিংসতার জেরে সেনাবাহিনী মোরালেসকে পদত্যাগ করতে বললে আদিবাসী এ নেতা তাতে সাড়া দিয়ে পদত্যাগ করেন। তারপর মেক্সিকোতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তার এ পদত্যাগ প্রত্যাখ্যান ও সিনেটের অনুমোদন ছাড়া আনেজ নিজেকে 'অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট' ঘোষণার প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকেই রাজধানী লা পাজ ও বলিভিয়ার বিভিন্ন শহরে মোরালেসের সমর্থকরা অবস্থান নিয়েছে। এমএএস নেতৃত্বাধীন সিনেট মোরালেসের পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ না করায় বামপন্থি এ নেতা কার্যত এখনো দেশটির প্রেসিডেন্ট পদেই আছেন। সাক্ষাৎকারে তিনিও সে কথাই বলেছেন। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, 'গণতন্ত্রের স্বার্থে, তারা যদি আমাকে নির্বাচনে দেখতে না চায়, আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি কেবল বিস্মিত হচ্ছি, আমাকে নিয়ে তাদের এত ভয় কেন?' তার এ পদত্যাগকে কেন্দ্র করে ল্যাতিন আমেরিকাজুড়ে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও পর্যবেক্ষকদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন। সাক্ষাৎকারে মোরালেস তার দলের সঙ্গে বিরোধীদের আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, 'বলিভিয়ার সংবিধান অক্ষুণ্ন রাখতে হলে আগামী জানুয়ারির মধ্যেই দেশটিকে একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও সরকার বেছে নিতে হবে। এ কারণেই ডান ও বামদের মধ্যে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।' তিনি প্রার্থী না হলে, তার দল কাকে বেছে নেবে, তার উত্তরে ৬০ বছর বয়সি মোরালেস বলেন, 'জানি না, জনগণই বেছে নিক।' বলিভিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা এ প্রেসিডেন্টের হাত ধরেই গত দেড় দশকে বলিভিয়ার অর্থনীতিতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে; ল্যাতিনের অন্যতম দরিদ্র দেশ থেকে পরিণত হয়েছে সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রে। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মদদেই বলিভিয়ায় তাকে ক্ষমতাচু্যত করা হয়েছে। সহিংসতা এড়াতেই তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। মেক্সিকোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও তার জন্য বিমান পাঠাতে প্রস্তাব দিয়েছিল বলেও জানান তিনি। হাসতে হাসতে মোরালেস বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিমান পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে আমরা যেখানে যেতে চাই, সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছিল। আমি নিশ্চিত যে, তারা আমাদের গুয়ানতানামো কারাগারে নিয়ে যেত।' সাক্ষাৎকারে দ্রম্নত দেশে ফেরার আকুতিও ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, 'প্রয়োজনে কেবল দলের একজন কর্মী হিসেবে ফিরে যাব। আমার সংগঠন করার অভিজ্ঞতা, নির্বাচনী প্রচারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।' ক্ষমতাচু্যত এ প্রেসিডেন্টকে দেশে ফেরার সুযোগ দিলেও তাকে নির্বাচনে জালিয়াতি ও অন্যান্য অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে বলে শুক্রবারও বলেছেন দেশটির স্বঘোষিত 'অন্তর্র্বর্তী প্রেসিডেন্ট' আনেজ। মোরালেসের দল এমএএসের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মোরালেসের সমর্থকদের ওপর পুলিশের গুলি, নিহত ৫ এদিকে, সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের সমর্থকদের বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে দেশটির পুলিশ। এতে পাঁচজন নিহত ও অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। শুক্রবার সকালে সাকাবা শহরে কয়েক হাজার আদিবাসী বিক্ষোভকারী জড়ো হন। কিন্তু তারা কোচাবামবার সামরিক তলস্নাশি চৌকি অতিক্রম করতে চাইলে সংঘর্ষ শুরু হয়। গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে এই জায়গায় বেশ কয়েকবার মোরালেসপন্থি ও তাদের বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর দেশটিতে চরম অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।