শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ, নিরাপত্তায় জোর

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে
শপথ নিয়েছেন শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়া তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। অনুরাধাপুরা শহরের একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরে এ শপথ নিয়েই সবার আগে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া তামিল সংখ্যালঘু এবং মুসলমানদেরও তাকে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি গত ১৬ নভেম্বর শ্রীলংকার অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট ৩৫ জন প্রার্থী অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন 'ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি'র (ইউএনপি) সাজিথ প্রেমাদাসা এবং বিরোধী দল 'শ্রীলংকা পিপলস ফ্রন্ট'র (এসএলপিপি) গোতাবায়া রাজাপাকসের মধ্যে। ইস্টার সানেডেতে বোমা হামলায় সমালোচনার জেরে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা এবারের নির্বাচনে অংশ নেননি। শ্রীলংকার নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ। আনুষ্ঠানিক ফলে ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন গোতাবায়া। এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্নেল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। নজরদারি ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা কাঠামো শক্তিশালী করতে চান তিনি। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে গোতাবায়া বলেন, জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করবেন তিনি। গোতাবায়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার সময় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের যেভাবে দমন করেছিলেন, তা নিয়ে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদ হয়েও কেন বিজয়ী হলেন তিনি? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, এই নির্বাচনকে ঘিরে শ্রীলংকার জনগণের মধ্যে বিভক্তি ছিল স্পষ্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, গোতাবায়া সিংহলি সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় বেশি ভোট পেয়েছেন, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসার জনপ্রিয়তা ছিল সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলমানদের মধ্যে। কিন্তু নির্বাচনের আংশিক ফল বেরুনোর পরই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে গোতাবায়াই বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। শ্রীলংকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলিদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় গোতাবায়া। তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রায় ১০ বছর শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, এবং শ্রীলংকায় তামিলদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ অবসানের কৃতিত্ব দেওয়া হয় তাদের। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যে রকম কঠোর এবং নিষ্ঠুরভাবে তিনি দমন করেছিলেন, সেজন্য গোতাবায়া বেশ বিতর্কিত। রাজপাকসে ভাইয়েরা প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার সময় কয়েক দশকব্যাপী চলা তামিল টাইগার বিদ্রোহ দমন করা হয়, যে যুদ্ধে সব মিলিয়ে এক লাখ লোক নিহত হয়েছিল। তা ছাড়াও ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সরকার-সমালোচক সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, তামিলসহ হাজার হাজার মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনেরও অভিযোগ ওঠে। কিন্তু গোতাবায়া রাজাপাকসে এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।