শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন তীব্র

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে
শ্রীলংকার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি ছিল তীব্রভাবে জাতিগত-ধর্মীয় রেখায় বিভক্ত। তামিল ও মুসলমান সংখ্যাগুরু উত্তর ও পূর্বাঞ্চল ছাড়া প্রতিটি জেলায় 'শ্রীলংকা পিপলস ফ্রন্ট'র (এসএলপিপি) গোতাবায়া রাজাপাকসে জয়ী হয়েছেন। আর তামিল ও মুসলমান এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভোট পেয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা। মূলত তামিল ও মুসলমান দলগুলোকে নিয়েই গঠিত 'নিউ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট' (এনডিএফ) থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন সাজিথ। গোতাবায়া কলম্বোতে নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে জনগণের উদ্দেশে দেয়া তার প্রথম বক্তব্যে তামিল ও মুসলমান সংখ্যালঘুদের আশঙ্কা দূর করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। গোতাবায়া বলেছেন, তিনি এখন দেশের সব নাগরিকের প্রেসিডেন্ট, শুধু যারা তাকে ভোট দিয়েছেন, তাদের নন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশঙ্কায় গত রোববার দেশটির উত্তরাঞ্চলে তামিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় সারা দিনই আতঙ্ক বিরাজ করেছে। রাস্তাঘাট ছিল জনশূন্য এবং জনগণ তাদের বাড়ি-ঘরে থেকেছে। তবে বিকালের দিকে অবস্থা কিছুটা বদলে যায়। সন্ধ্যার দিকে জাফনার বেশ কয়েকটি জায়গায় বাজি পোড়ানো হয়। সম্ভবত এটা গোতাবায়ার পক্ষে কাজ করেছে, তামিলদের ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর কাজ। সারা জীবন যুদ্ধক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে নিয়ে কাজ করা প্রবীণ ক্যাথলিক যাজক ফাদার এস দামিয়েন বলেন, 'ভোটের মাধ্যমে সিংহলিরা কথা বলেছে। আর তামিলরা প্রত্যাঘাতের আশঙ্কা করছে। এই আশঙ্কা যে অমূলক, তা প্রমাণের দায়িত্ব আমাদের সবার। দেশের কল্যাণে কাজ করার দায়িত্বও আমাদের, এমনকি যাদের সঙ্গে আমরা কাজ করতে পারব না বলে মনে করছি, তাদের সঙ্গেও।' গোতাবায়া দেশবাসীকে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন, তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকার করেছেন, সেগুলো রক্ষা করবেন। তার ইশতেহারে বেশি জোর দেয়া হয় জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়নে সমতা এবং কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর। অনুরাধাপুরে গত সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন গোতাবায়া। এই শহরটি উত্তর-পূর্ব প্রদেশের রাজধানী এবং ঐতিহাসিকভাবে বৌদ্ধবাদের সঙ্গে যুক্ত। বিজয়ী হওয়ার পর গোতাবায়াকে অভিনন্দন জানিয়েছেন উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিভি বিগ্নেস্বরণ। পাশাপাশি তিনি শ্রীলংকার তামিলদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উলেস্নখ করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন 'দেশকে জলনিরোধক সাম্প্রদায়িক কম্পার্টমেন্টে'র মতো করে বিভক্ত করে ফেলেছে।' এর আগে বিগ্নেস্বরণ ১৩ দফা দাবি মেনে না নেয়া হলে গোতাবায়াকে সমর্থন দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সব সম্প্রদায়কে সমান দৃষ্টিতে দেখতে এবং তামিলদের উদ্বেগগুলো নিরসন ও তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অধিকারের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নতুন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে উলেস্নখগুলো দিক হলো, সাধারণভাবে ইউএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত কলম্বো, ক্যান্ডি ও বাদুলস্নায় গোতাবায়া বিজয়ী হয়েছেন। অনেকে মনে করেন, ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডেতে চার্চে হামলা সিংহলি ভোটারদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং সিংহলি ও অ-সিংহলি ভোটের বিভক্তি বাড়িয়েছে। প্রখ্যাত 'মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট' জেঝিমা ইসমাইল বলেন, 'এবারের নির্বাচনে জাতীয় নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে। সিংহলি জনগণ মনে করেছে, তাদের নির্বাচিত সরকারের ওপরই কেবল তারা নির্ভর করতে পারে। তবে শ্রীলংকার জনগণ হিসেবে আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি, তাই সমঝোতা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শ্রীলংকান পরিচয় নিয়ে এখানকার মুসলমানরা সবসময় গর্ব অনুভব করেছে। দেশের প্রতি আনুগত্য, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক অনুশীলনই হলো দেশাত্ববোধ। অন্যকে দূরে রাখা নয়। আমরা এক নতুন পথের অনুসারী শ্রীলংকাকে দেখতে পাবো বলে আমি আশা করছি।' সাজিথের পরাজয়ের জন্য অনেকে 'ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি'র (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিঙ্গেকে দায়ী করেছেন। তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাজিথকে সমর্থন দেননি এবং যখন বুঝতে পারলেন, দল তার প্রার্থিতা মেনে নেবে না, শুধু তখনই সাজিথের প্রার্থিতা মেনে নিয়েছেন। ফলে গোতাবায়া নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার অন্তত একমাস পর সাজিথের প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিক্রমাসিঙ্গে বা ইউএনপির কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা সাজিথের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি। তাদের কাউকে সাজিথের সঙ্গে রাজনৈতিক মঞ্চেও দেখা যায়নি। অন্যদিকে, গোতাবায়ার প্রচারণা ছিল নিয়মতান্ত্রিক এবং সুসংগঠিত, সংখ্যাগুরু সিংহলিদের উদ্বেগের প্রতিটি বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। বিশেষ করে গত পাঁচ বছর ইউএনপি যে বিশৃঙ্খল অবস্থায় দেশ পরিচালনা করেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর