জবানবন্দিতে সন্ডল্যান্ড

ইউক্রেনের ওপর চাপ দিয়েছিলেন ট্রাম্প

পম্পেও এবং বোল্টনও এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল ছিলেন :রাষ্ট্রদূত অভিশংসনের শুদ্ধি অভিযান শেষ বলে দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্টের

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত গর্ডন সন্ডল্যান্ড
যাযাদি ডেস্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্তের প্রকাশ্য শুনানিতে বুধবার জবানবন্দি দিয়েছেন এ তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত গর্ডন সন্ডল্যান্ড। শুনানির শুরুতেই তিনি বলেন, 'সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনকে চাপ দেওয়ার নির্দেশ ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।' সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স রাষ্ট্রদূত সন্ডল্যান্ড বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন জানতেন, তারা কী করছেন এবং কেন করছেন। তিনি আরও জানান, প্রেসিডেন্ট চেয়েছিলেন, তার ব্যক্তিগত আইনজীবী ও সাবেক নিউইয়র্কের মেয়র রুডি গিলানি যেন ইউক্রেনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের নেতৃত্বে থাকেন। প্রেসিডেন্টের নির্দেশেই ইউক্রেন ইসু্যতে রুডি গিলানির সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন সন্ডল্যান্ড। তার এ জবানবন্দি ইউক্রেন বিতর্কে ট্রাম্পের সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকারই প্রমাণ দিচ্ছে। মার্কিন এই রাষ্ট্রদূত বলেন, 'তিনি ইউক্রেনকে বলেছিলেন, তারা ট্রাম্প এবং গিলানির দাবি মেনে বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের একটি সরকারি বিবৃতি না দেওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নাও পেতে পারে।' সন্ডল্যান্ডের কথায়, 'যুক্তরাষ্ট্রের ওই নিরাপত্তা সহায়তা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং তাতে দেরি হওয়াটা উচিত ছিল না।' এ কারণে সাহায্য নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে তদন্ত বিষয়ক বিবৃতি দেওয়ার জন্য সন্ডল্যান্ড ইউক্রেনকে চাপ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'ইউক্রেন ওই রকম বিপদে পড়েছিল দেখে আমি সত্যিই দুঃখিত। কিন্তু ওই সমস্যা সমাধানে এবং অচলাবস্থা নিরসনে তখন আমার যে চেষ্টা করার ছিল, তা করার জন্য আমি দুঃখিত নই।' কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে শুনানির উদ্বোধনী বক্তব্যে সন্ডল্যান্ড এমন সাক্ষ্য দিয়ে বোমা ফাটিয়েছেন। যা হোয়াইট হাউসের সব সাফাই এ বোমার তোড়ে উড়ে গেছে বলে মন্তব্য গণমাধ্যমের। তদন্তে দোষ বেরিয়ে এলে ট্রাম্প অভিশংসনের মুখে পড়বেন। তবে প্রতিনিধি পরিষদ যদি তার বিরুদ্ধে ভোট দেয় এবং সিনেটে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তবেই গদি হারাবেন ট্রাম্প। এর আগে গত মঙ্গলবার এ তদন্তের শুনানিতে অংশ নিয়ে খোদ হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারাই বলেছিলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত ফোনালাপ ছিল অশোধন ও অস্বাভাবিক। এদিন ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানিতে অংশ নেন হোয়াইট হাউসের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা জানান, ২৫ জুলাইয়ের ওই ফোনালাপ শোনার পর বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। ইউক্রেন বিষয়ক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলেক্সান্ডার ভিন্ডম্যান বলেন, 'ওই ফোন কলটি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। এতে আমি যা শুনেছি, তা যথার্থ ছিল না। হোয়াইট হাউসের আইনজীবীদের আমি আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছি।' অভিশংসনের শুদ্ধি অভিযান শেষ বলে দাবি ট্রাম্পের এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন শুনানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত গর্ডন সন্ডল্যান্ডের বক্তব্যের পর এই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, 'অভিশংসনের শুদ্ধি অভিযান আসলে শেষ।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, 'তার পক্ষে এমন বক্তব্যের পর আর কোনো শুনানি থাকতে পারে না।' ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের ওই ফোনালাপ ফাঁস হলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় ওঠে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে দেখা যায়, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রীতিমতো চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প। ওই ফোনকলের অনুলিপিও গোপন করতে চেয়েছিল হোয়াইট হাউস। তবে শেষ পর্যন্ত সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।