আসামের এনআরসি বাতিল হচ্ছে :ইঙ্গিত অমিতের

নতুন করে তালিকা হবে

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ছয় বছরের পরিশ্রম, ১৬০০ কোটি রুপি খরচ, হেনস্তা ও বহু মৃতু্যর নিটফল- কার্যত বাতিল হতে যাচ্ছে ভারতের আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তালিকা। বুধবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সেই ইঙ্গিত দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, গোটা ভারতের সঙ্গেই আসামে নতুন করে এনআরসি হবে। যার সূত্র ধরে আসামের অথর্মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও জানান, রাজ্যে হওয়া এনআরসি পুরোপুরি বাতিল করে সারা ভারতের সঙ্গে আসামেও নতুন করে এনআরসি হোক। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, পিটিআই ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে আসামে হওয়া এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় বাদ যান ১৯ লাখ মানুষ। যাদের মধ্যে অন্তত ১৩-১৪ লাখই হিন্দু। তালিকা প্রকাশ হতেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় শাসক দল বিজেপি। ওই এনআরসি সঠিক নয়, সেই যুক্তিতে সরব হয় রাজ্য বিজেপি। এনআরসিতে বেশিরভাগ হিন্দুর নাম বাদ পড়ায় ভোট ব্যাংকে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানায় আসাম বিজেপি। চাপ বাড়াচ্ছিল সংঘ পরিবারও। এই পরিস্থিতিতে আসামে নতুন করে এনআরসি হবে বলে বিতর্ক তৈরি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছে, এনআরসি মামলার মূল আবেদনকারী 'আসাম পাবলিক ওয়ার্কস'ও। তাদের দাবি ছিল, সব তথ্য আবারও যাচাই করা হোক। এই মামলার পরের শুনানি ২৬ নভেম্বর। সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ শর্মা বলেন, '১৬০০ কোটি রুপি খরচের সম্পূর্ণ তদন্তও হোক।' কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, আসামে এনআরসি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। আসাম চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে এনআরসি তৈরির ভিত্তিবর্ষ বলে ধরা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ভারতের সব রাজ্যে যখন এনআরসির কাজ শুরু হবে, তখন অতীতের একটি নির্দিষ্ট দিনকে ধরে তার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হবে। কোন বছরের কোন তারিখের ভিত্তিতে ওই কাজ শুরু হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ভিত্তিবর্ষ হচ্ছে না। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, এক দেশে দুটি ভিত্তিবর্ষ হতে পারে না। তাই গোটা ভারতে যে ভিত্তিবর্ষ ধরা হবে, সেটির হিসাবে আসমেও নতুন তালিকা তৈরি করা হবে। বিরোধীদের মতে, এনআরসিতে হিন্দুরা বাদ যাচ্ছেন বলে যে প্রচার শুরু হয়েছে, তা আটকাতেই ১৬০০ কোটি রুপি জলাঞ্জলি দিতে চান মোদি-শাহ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে করা তালিকা এভাবে বাতিল করা কি শীর্ষ আদালতের অবমাননা নয়? ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তারপরে কী হবে তা নিয়ে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আইনের সেই ফাঁক দেখিয়ে এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হওয়া এনআরসি কার্যত বাতিল করতে চাইছেন অমিতরা। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদারের মতে, 'নোট বাতিল, জিএসটির পর এনআরসি বাতিল বিজেপির তুঘলকি শাসনের আরও এক নজির। ১৬০০ কোটি রুপি খরচ হলো, কোটি কোটি মানুষ হয়রান হলেন, বহু লোক আত্মহত্যা করলেন। সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এনআরসি বাতিল অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা।' ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা নাগরিক সমাজের উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরীর মতে, রাজনৈতিক দলের একাংশ চেয়েছিল, বেশি করে মুসলমানের নাম বাদ পড়ুক। উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়াতেই হয়তো এনআরসি বাতিল করার কথা বলা হচ্ছে।