ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া চীনের

আইন করে হংকং বিক্ষোভে সায় ট্রাম্পের

এর মাধ্যমে অঞ্চলটির নাগরিক স্বাধীনতা চীন ক্ষতিগ্রস্ত করছে কি না তা যাচাই করা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের আইন ভুল বার্তা দেবে :হংকং সরকার

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ট্রাম্পকে সমর্থন করে এক বিক্ষোভকারীর পস্ন্যাকার্ড প্রদর্শন
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানানো একটি বিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার স্বাক্ষর করে সেটিকে আইনে পরিণত করেছেন। 'হংকং হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি অ্যাক্ট' নামের এ আইনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশেষ বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে হংকংয়ের পর্যাপ্ত স্বায়ত্তশাসন আছে কিনা, অন্তত বছরে একবার এটি পর্যালোচনা করে দেখার বিধান রাখা হয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই বিলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স বিলটিতে বলা হয়েছে, 'হংকং চীনের অংশ, কিন্তু আইনি ও অর্থনৈতিক পদ্ধতির দিক থেকে অনেকটাই আলাদা। হংকংয়ের নাগরিক স্বাধীনতা এবং 'বেসিক ল' দ্বারা সুরক্ষিত আইনের শাসন চীন ক্ষতিগ্রস্ত করছে কিনা, বার্ষিক পর্যালোচনায় এটি যাচাই করা হবে।' এছাড়া ট্রাম্প দ্বিতীয় আরেকটি বিলেও স্বাক্ষর করেছেন। তাতে হংকংয়ের পুলিশের কাছে ভিড় নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম বিশেষ করে কাঁদানে গ্যাস, পেপার স্প্রে, রাবার বুলেট ও স্টান গান বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, চীনের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক হংকংয়ের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না, অর্থাৎ হংকংয়ের বিশেষ বাণিজ্য মর্যাদা বজায় থাকবে। বিলে আরও বলা হয়েছে, অহিংস প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হলেও মার্কিন ভিসা পেতে হংকংবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন দেওয়া হবে। বুধবার বিলটিতে স্বাক্ষর করার পর ট্রাম্প বলেন, 'চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং হংকংয়ের জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে' তিনি বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন। দুই দেশের মধ্যে চলা বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ করতে বর্তমানে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার চেষ্টায় আছেন তিনি। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে 'হংকং হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রসি অ্যাক্ট' নামের এই বিল কণ্ঠভোটে পাস হয়। চীনা কর্তৃপক্ষের দমনপীড়ন থেকে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের সুরক্ষায় এ বিল পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে অঞ্চলটির মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে মার্কিন সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়। সিনেটে পাস হওয়ার পর বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে তোলা হয়। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অনুমোদন নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে যায় বিলটি। গত জুনে আন্দোলনের শুরু দিক থেকেই এই বিল নিয়ে কথা হচ্ছিল। সেখানে বলা হয়, হংকং চীনের অংশ, কিন্তু সেখানে আলাদা আইন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আছে। এই আইনে খতিয়ে দেখা হবে চীন হংকংয়ের নাগরিক স্বাধীনতা ও আইনে হস্তক্ষেপ করেছে কি-না। এদিকে, ট্রাম্প এই বিলে স্বাক্ষর করার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন এই আইনের জবাবে 'কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা' গ্রহণ করবে তারা। 'অশুভ উদ্দেশে' যুক্তরাষ্ট্র এই আইন করেছে বলে অভিযোগ তাদের। হংকং ইসু্যতে যদি যুক্তরাষ্ট্রের 'ইচ্ছে মতো কর্মকান্ড' অব্যাহত তাকে তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চীনা উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেং জিগুয়াং দাবি করেছেন, এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি এ 'ভুল সংশোধনের' আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার দাবি, এর মাধ্যমে হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের সহিংসতায় উসকানি দেওয়া হয়েছে; যা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির গুরুতর লঙ্ঘন। এ ঘটনায় বেইজিং তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে। চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইউচেং বৃহস্পতিবার দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত টেরি ব্রানস্টাডকে তলব করেছেন। তার কাছে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ব্যাখা জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি ঠেকানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন ভুল বার্তা দেবে : হংকং সরকার এদিকে, হংকংয়ে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থনে জানিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের করা আইনে বিশ্ব ভুল বার্তা পাবে দাবি করেছে চীনের অনুগত হংকং সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনের বিরোধিতা করছে তারা। কিন্তু হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের অন্যতম নেতা জোশুয়া ওয়াং মার্কিন এই আইনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইন 'সব হংকংবাসীর জন্য উলেস্নখযোগ্য অর্জন'। কয়েক মাস ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের ফলে হংকংয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে চীনা নিয়ন্ত্রণাধীন আধা স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলটিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে। কিছুদিন ধরে দফায় দফায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করছে পুলিশ।