সূযর্-রহস্য সন্ধানে গেল পাকার্র

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ডেল্টা ফোর রকেটে রওনা পাকাের্রর
স্বপ্ন সত্যির পথে যাত্রা শুরু করল নাসা। সূযের্র উদ্দেশে পাড়ি দিল নাসার মহাকাশ যান ‘ডেল্টা ফোর’। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে পাড়ি দেয় যানটি। প্রথমে শনিবার ভোরে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ছাড়ার কয়েক মিনিট আগেই হঠাৎ পিছিয়ে দেয়া হয় ‘পাকার্র’ অভিযানের সময়। প্রথমে ২০ মিনিট। তারপর আরও ৩৫ মিনিট এবং শেষে ২৪ ঘণ্টার জন্য। কারণ, জ্বালানি সমস্যা। যে বিশাল ডেল্টা ফোর রকেটে চড়ে পাকার্র সৌর তদন্তের সৌর আবতর্ন যানটির পৃথিবী থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল, সেই রকেটটিতেই জ্বালানি সংক্রান্ত গোলযোগ দেখা দেয় শেষ মুহ‚তের্। আর তার জেরে পিছিয়ে দেয়া হয় উৎক্ষেপণের সময়। নাসার টিম তাই শনিবার দিনরাত কাজ করে এই সমস্যার সমাধানের। সব ঠিকঠাক করে, মাকির্ন সময় অনুযায়ী রোববার ভোরে পাকার্র সৌর তদন্ত অভিযান নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দেয় ম্যামথ রকেট ডেল্টা ফোর। কিন্তু, কেন শুরুতেই থমকে গেল সূযর্ ছেঁায়ার অভিযান? এই দেরির প্রভাব কি পড়বে অভিযানের অন্যান্য হিসাব নিকাশেও? বিশেষ করে, নাসার দেয়া একটি তথ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যার উত্তরে বিজ্ঞানীরা জানান, তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। যাত্রা শুরুর পর পাকার্র সৌর অভিযান সূযের্র সবচেয়ে কাছে প্রথমবার আসবে চলতি বছরেরই নভেম্বর মাসে। সূযের্র কাছে যখন পেঁৗছাবে তখন পাকাের্রর সৌর আবতর্ন যানটির গতিবেগ হবে ঘণ্টায় সাত লক্ষ কিলোমিটার। সেক্ষেত্রে পাকাের্রর সৌর আবতর্ন যানটিই হবে মানবনিমির্ত সবচেয়ে গতিময় বস্তু। এই প্রবল গতিময় পাকার্রকেই শুক্র গ্রহের মাধ্যাকষর্ণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করে রেখেছে নাসা। সূযর্ আর শুক্রের মাঝখান দিয়ে যখন পাকার্র যাবে, তখনই শুক্রের মাধ্যাকষর্ণ ক্ষেত্রে প্রবেশ করার কথা পাকাের্রর। তখন শুক্রের আকষর্ণ ক্ষমতার সাহায্য নিয়েই কাক্সিক্ষত গতিবেগের লক্ষ্যে পেঁৗছাবে পাকার্র। তবে উৎক্ষেপণে দেরি হলেও সেই হিসাব গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ১৫০ কোটি মাকির্ন ডলারের সূযর্ ছেঁায়া তদন্তও বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তাতে। প্রায় একটি চার চাকা গাড়ির আকৃতির ওই সৌর আবতর্ন যান এগোবে নিজের কক্ষপথ ধরে। তারপর সূযের্র যত কাছে এগোবে, ততই গতিবেগ বাড়বে পাকাের্রর। সেই গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্যও একটি পরিকল্পনা রয়েছে বিজ্ঞানীদের। প্রথমবার সূযের্র কাছে পেঁৗছানোর পর সাত বছরে সাতবার সূযর্ এবং বুধ গ্রহের মাঝখান দিয়ে যাওয়া আসা করবে পাকার্র। যার মধ্যে সূযের্র সবচেয়ে কাছে সেটি পেঁৗছাবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। তখন সূযের্র সঙ্গে পাকাের্রর দূরত্ব থাকবে মাত্র ৬৩ লাখ কিলোমিটার। সূযের্র এত কাছে তার প্রখর তাপমাত্রা যাতে পাকাের্রর কোনো ক্ষতি না করতে পারে, সেজন্য বিশেষ তাপমাত্রা প্রতিরোধক আস্তরণ লাগানো হয়েছে পাকাের্রর সৌর আবতর্ন যানটির গায়ে। সাড়ে চার ইঞ্চি পুরু ওই আস্তরণকে ‘আল্ট্রা পাওয়ারফুল হিট শিল্ড’ বলে বণর্না করেছে নাসা। সাড়ে চার ইঞ্চির ওই তাপমাত্রা প্রতিরোধক আস্তরণের ক্ষমতা নাকি এতটাই, একটা সূযর্ তো বটেই সূযের্র থেকে ৫০০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয়তাকেও মোকাবেলা করতে পারবে অনায়াসে। তাই সূযের্র কাছে পেঁৗছানোর পরও ওই হিট শিল্ড পাকাের্রর সৌর আবতর্ন যানের ভেতরের তাপমাত্রা বেঁধে রাখবে কেবলমাত্র ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই। এছাড়াও তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য পাকাের্রর সৌর আবতর্ন যানে থাকছে ‘সোলার অ্যারে কুলিং সিস্টেম’। সব মিলিয়ে ২৪টি আবতর্ন পথে এই লক্ষ্যে পেঁৗছাবে পাকাের্রর সৌর আবতর্ন যান। এই প্রথম কোনো মানব তদন্ত অভিযান পেঁৗছাবে সূযের্র পরিমÐল ‘করোনা’তে। সূযের্র পরিমÐল করোনায় পেঁৗছে সেখানকার ছবি তুলবে পাকার্র। করোনা, যা কিনা সূযর্পৃষ্ঠের থেকেও ৩০০ গুণ বেশি তপ্ত এবং যেখানে সবর্ক্ষণই তপ্ত সৌর প্লাজমা উদ্গীরণ হয়, তা কাছ থেকে দেখবে পাকার্র। তথ্য সংগ্রহ করবে সৌর ঝড় এবং সৌর পরিমÐলে ক্রমাগত ঘটে চলা অন্যান্য অজানা কাযর্কলাপ সম্পকের্ও। আর তাই প্রথম সোলার উইন্ড-এর কথা বলেছিলেন যে বিজ্ঞানী, সেই ইউজিন পাকাের্রর নামে এই তদন্ত অভিযানের নামকরণ করেছে নাসা। বিজ্ঞানী ইউজিনের বয়স ৯১ বছর। সেদিক থেকে দেখলে এই প্রথম কোনো অভিযানের নাম রাখা হলো জীবিত ব্যক্তির নামে। সংবাদসূত্র : বিবিসি