লন্ডনে ছুরি হামলা

হামলাকারী সন্ত্রাসের দায়ে সাজা খেটেছেন

ম আল-কায়েদার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই হামলা : পুলিশ ম হামলা প্রতিহতে জনসাধারণের প্রশংসায় বরিস ও করবিন ম পাকিস্তানে বেড়ে ওঠেন হামলাকারী উসমান

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হামলাকারী উসমান খান
লন্ডন সেতুতে শুক্রবার ছুরি হামলা চালানো যুবক উসমান খান-এর আগেও সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৮ বছর কারাগারে ছিলেন। হামলার পর পুলিশের গুলিতে নিহত ২৮ বছর বয়সী উসমান গত বছরের ডিসেম্বরে অনুমতি সাপেক্ষে জেল থেকে ছাড়া পান। শুক্রবারের হামলায় দুইজন নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স দন্ড শেষ হওয়ার আগে অনুমতি সাপেক্ষে ছাড়া পেলেও অপরাধীকে সাধারণত কর্তৃপক্ষের নজরদারির মধ্যেই থাকতে হয়; হাতে ইলেক্ট্রনিক ট্যাগ পরে থাকার শর্তে উসমানকে সে সময় মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার নেইল বসু বলেন, 'সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত অপরাধে ২০১২ সালে দন্ডিত উসমান তাদের কাছে আগে থেকেই পরিচিত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছেন। মোট ৯ জনের ওই গ্রম্নপটি আরও কিছু হামলার পরিকল্পনা করেছিল।' পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, 'তিনি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুমতি সাপেক্ষে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন; এর মধ্যেই তিনি কীভাবে এ হামলা চালালেন, স্পষ্টতই আমাদের তদন্তের অন্যতম প্রধান বিষয় থাকবে এটি।' ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত উসমান ভুয়া একটি বিস্ফোরক ডিভাইস পরে ছিলেন বলেও জানিয়েছে তারা। পুলিশ আসার আগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পথচারী ও সাধারণ জনগণই হামলাকারীকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। শুক্রবারের এ ছুরি হামলাকে দেশটির পুলিশ 'সন্ত্রাসী ঘটনা' হিসেবে ঘোষণা করেছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, পুলিশ কমিশনার ক্রেসিডা ডিকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনও হামলা প্রতিহতে সাধারণ মানুষের বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। টোরি ও লেবার পার্টি ছুরি হামলার ঘটনায় শুক্রবার রাতের নির্বাচনী প্রচারণাও বাতিল করে। গত নভেম্বরে যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী হামলার হুমকির মাত্রা কমানোর পর এই হামলা হলো। ২০১৭ সালের জুনে তিন জঙ্গি লন্ডন সেতুতে ভিড়ের মধ্যে ভ্যান তুলে দিয়ে ও ছুরি মেরে আটজনকে হত্যা করেছিল। এদিকে, লন্ডনের পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা হামলাকারী উসমান খানের স্ট্যাফোর্ডশায়ারের ঠিকানায় তলস্নাশি চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটের দিকে লন্ডন সেতুর উত্তর প্রান্তের ফিশমঙ্গারস হল থেকেই হামলার সূত্রপাত। সে সময় ওই হলে কারাবন্দিদের পুনর্বাসন নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের 'লার্নিং টুগেদার' নামের সম্মেলনটি চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাবেক কারাবন্দিদের ওই মিলনমেলায় উসমানও ছিলেন। ২৮ বছর বয়সী এ যুবক লন্ডন সেতুর আগে হলটির ভেতরে থাকা লোকজনের ওপরও হামলা চালিয়েছিলেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনার সময় ওই এলাকায় থাকা সাংবাদিক জন ম্যাকমানাস জানান, তিনি সেতুর ওপর ধস্তাধস্তি দেখতে পান। তিনি বলেন, কয়েকজন মানুষ একজনকে আটকাচ্ছিল। পুলিশ দ্রম্নত সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তির দিকে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে মাটিতে শুয়ে থাকা এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে পুলিশকে গুলি করতে দেখা গেছে। সু্যট ও জ্যাকেট পরা আরেকজনকে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করে দৌড়ে পালাতেও দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে লন্ডন সেতুতে পুলিশকে একটি সাদা লরির দিকে বন্দুক তাক করে থাকতেও দেখা গেছে। ঘটনার পর মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্রিজের আশপাশের এলাকায় টহল বাড়িয়েছে। ঘটনাস্থল শনিবারও ঘিরে রাখা হয়। জনসাধারণকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি তারা হামলার ঘটনায় কেউ কোনো তথ্য জানলে তাদেরকে তদন্তে সহায়তা করারও অনুরোধ জানিয়েছে। পাকিস্তানে বেড়ে ওঠেন হামলাকারী এদিকে, লন্ডন সেতুতে ছুরি হামলা চালানো যুবক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং কৈশোরের একটি অংশ সেখানেই কাটিয়েছিলেন তিনি। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই ২৮ বছরের উসমান খান শুক্রবার লন্ডন সেতুতে হামলা চালান বলে জানিয়েছে পুলিশ। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ২০১২ সালে জনসুরক্ষা আইনে দন্ড দেওয়ার সময় আদালত সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, উসমান 'ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী'। জনগণের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হওয়া পর্যন্ত তাকে মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। পাকিস্তানে বসবাসের সময় উসমান কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেননি। তিনি সেখানে তার অসুস্থ মায়ের সঙ্গে বাস করতেন।