নাগরিকত্ব বিলে অনুমোদন ভারতের মন্ত্রিসভার

আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টে এটি গৃহীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের বহুল সমালোচিত ও বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অবশেষে বুধবার দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া অমুসলমানদের নাগরিকত্ব দিতে এ বিলটি আনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে বিলটি গৃহীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ এ বিল আগেও একবার পার্লামেন্টে পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তখন সেটি পাস করানো যায়নি। ওই পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ফের পার্লামেন্টে উঠতে যাচ্ছে বিলটি। তবে আগেরবারের প্রতিবাদের কথা মাথায় রেখে এবার আগেভাগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বুধবার বিলটি পাসের আগের দিন মঙ্গলবার এ নিয়ে কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী রাজনাথ সিং। ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এমপিদের উদ্দেশে তিনি সে সময় বলেন, এই বিল কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এটি অগ্রাধিকার পাবে। এর লক্ষ্য হচ্ছে- হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি- এই ছয়টি সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন পার্লামেন্টে এ বিল উপস্থাপন করবেন, তখন বিজেপির সব এমপিকে উপস্থিত থাকতে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিলে নাগরিকত্ব থেকে শুধু মুসলমানদের বাদ দেওয়ার সমালোচনা করছে বিরোধীরা। তারা বলছে, এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে অর্থমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অমুসলমানদের নাগরিকত্ব দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় যখন এ বিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন এর বিরুদ্ধে আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। প্রতিবাদে নেমেছিল অসমিয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো। উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। এবারও বিল পেশের খবর বেরোতেই আসামের নানা জায়গায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। যেসব সংগঠন ইতোমধ্যে রাজপথে নেমেছে, তার মধ্যে অন্যতম কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব রাতুল হোসেইন বলেন, 'ভারতীয় সংবিধানের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু এই বিলে সেটাকেই ধ্বংস করে দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে। এ দেশের নাগরিকত্ব পেতে ধর্ম কোনো ভিত্তি হতে পারে না, আর এই বিলে সেটাই করা হচ্ছে।' তিনি বলেন, আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি)-তে যে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, তাদের মধ্যে বেছে বেছে মুসলমান ছাড়া অন্যদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই বিল আনা হচ্ছে। আসামের অনেক বাংলাভাষী হিন্দু, যাদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে, তারা জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হলে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিজেপি নেতারা এমনটাই বলেছেন তাদের। আসামে বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা বাস্তবায়ন করে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার সেখানকার ১৯ লাখ মানুষকে নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এই বাদ পড়াদের অধিকাংশ বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান এবং অনেকেই বাংলাদেশি। তবে অন্য ধর্মেরও অনেক অনুসারী এই তালিকায় ঠাঁই পাননি। এনআরসি বেআইনি : মমতা এদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্বের বিলটি অনুমোদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে আবারও সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, বিজেপি হিন্দু-মুসলমান ভাগাভাগির খেলায় মেতেছে। যার পরিণাম হবে ভয়াবহ। এদিন তিনি জোর গলায় অমিত শাহেরও সমালোচনা করেন। এর আগে ঝাড়খন্ডে প্রচারে গিয়ে অমিত বলেছিলেন, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগেই এনআরসি করে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। অপরদিকে মমতা বলেন, এই এনআরসি হল বেআইনি। আসামেও তো এনআরসি মানা হচ্ছে না। কোনও রাজ্যই এই এনআরসি মেনে নেবে না। এনআরসির বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে সব বস্নকে তৃণমূলের কর্মীরা এনআরসির বিরুদ্ধে নেমেছেন। প্রথম থেকেই মমতা বলে আসছেন, বাংলায় এনআরসি করতে দেওয়া হবে না।