অভিমত তিন বিশেষজ্ঞের

ট্রাম্পের কর্মকান্ড অভিশংসনযোগ্য

ইউক্রেন ছাড়াও প্রেসিডেন্টের আরও অনেক দিক খতিয়ে দেখছেন ডেমোক্রেটরা অবশ্য রিপাবলিকান বিশেষজ্ঞ অভিশংসনের অকাট্য প্রমাণ খুঁজে পাননি বলে দাবি

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিপাকে ফেলতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, তা 'অভিশংসনযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় কমিটির শুনানিতে আসা তিন আইন বিশেষজ্ঞ। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উত্থাপনের প্রস্তুতিতে বুধবার প্রথম এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, সিএনএন শুনানিতে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারা বলেন, কেবল ইউক্রেন বিষয়েই নয়, অভিশংসনের অভিযোগ খুঁজতে তারা ট্রাম্পের আরও অনেক কিছুই খতিয়ে দেখবেন। গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার আঁতাত অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়া মার্কিন বিচার বিভাগের সাবেক স্পেশাল কাউন্সেল (উপদেষ্টা) রবার্ট মু্যলারকে বাধা দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো ধরনের চেষ্টা করেছিলেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভ) বিচার বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান জেরল্ড ন্যাডলার বলেন, 'প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তা সাংবিধানিক ব্যবস্থার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে হাজির হয়েছে।' চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিশংসন তদন্তের মূল লক্ষ্য ছিল, আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য ডেমোক্রেট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনকে যে অনুরোধ করেছিলেন ট্রাম্প, তাতে কোনো আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কর্মকান্ড 'ভয়াবহ অপরাধ ও অপকর্মের' মাত্রা অতিক্রম করে সংবিধান অনুযায়ী অভিশংসনযোগ্য হয়েছে কিনা, বুধবার থেকে শুরু হওয়া শুনানিতে কংগ্রেসের বিচার বিভাগ তাই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবে। প্রথম দিনের দীর্ঘ শুনানিতে ডেমোক্রেটদের বেছে নেয়া তিন আইন বিশেষজ্ঞ স্পষ্টভাবে বলেছেন, ট্রাম্পের কর্মকান্ড 'অভিশংসনযোগ্য' অপরাধ বলেই মনে করছেন তারা। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইন বিশেষজ্ঞ মাইকেল গেরহার্ড বলেন, 'যা নিয়ে আমরা কথা বলছি, তা যদি অভিশংসনযোগ্য না হয়, তাহলে কিছুই অভিশংসনযোগ্য হতে পারে না।' ডেমোক্রেটদের বেছে নেওয়া বাকি দুই অধ্যাপকের কণ্ঠেও ছিল একই সুর। এদিনের শুনানিতে রিপাবলিকানদের মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। তাদের ডাকা জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাথন টার্লে বলেন, অভিযোগগুলোর বিপরীতে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে অকাট্য প্রমাণ দেখছেন না তিনি। ট্রাম্পকে অভিশংসনে তদন্ত প্রয়োজনের চেয়েও দ্রম্নতগতিতে এগিয়েছে এবং এখানে অভিযোগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট মানুষজনের সাক্ষ্যের ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি ও কর্মকান্ডের সমালোচনা করা যে কেউই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন যে, অভিশংসনের এ চলমান আইনি লড়াই মোটেও যথোপযুক্ত মানের নয়। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বিপজ্জনক, কেননা এখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিশংসন নিয়ে কথা হচ্ছে।' আগের নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেননি বলেও জানান রিপাবলিকানদের বেছে নেওয়া এ আইন বিশেষজ্ঞ। ট্রাম্প অবশ্য শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছেন। মঙ্গলবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের সম্ভাব্য ভিত্তি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন। লন্ডনে ন্যাটো সম্মেলনে অংশ নেয়া ট্রাম্প ওই প্রতিবেদনকে 'কৌতুক' অ্যাখ্যা দিয়েছেন। ডেমোক্রেটদের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। 'তারা কি আদৌ আমাদের দেশকে ভালোবাসে?' সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের ওই ফোনালাপ ফাঁস হলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় ওঠে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে দেখা যায়, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রীতিমতো চাপ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই ফোনালাপের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি সামনে আসে। তাকে প্রেসিডেন্সি থেকে সরাতে তদন্ত শুরু করে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ। তবে এই তদন্তকে 'ন্যাক্কারজনক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ট্রাম্প। তার দাবি, তাকে অভিশংসনের ক্ষমতা বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেই। তবে এমন দাবির মধ্যেই নিজের অভিশংসন তদন্তের শুনানিতে ডাক পড়ে তার। গত রোববার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রাম্প কিংবা তার কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেবেন না। অভিশংসন প্রক্রিয়ায় 'ন্যায়পরায়ণতার' ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের।