অথৈর্নতিক যুদ্ধের কবলে তুরস্ক

জ্জ ডলারের বিপরীতে লিরার সবোর্চ্চ দরপতন জ্জ ট্রাম্প ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করায় তুকির্ মুদ্রা লিরার বিনিময় মূল্য সবির্নম্ন

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক‚টনৈতিক উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় অথৈর্নতিক যুদ্ধের কবলে পড়েছে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দেশের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেয়ার পর মাকির্ন ডলারের বিপরীতে তুকির্ মুদ্রা লিরার বিনিময় মূল্য সবির্নম্ন পযাের্য় পেঁৗছেছে। ডলারের বিপরীতে সবোর্চ্চ এই দরপতনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রয়োজন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নগদ অথর্ সরবরাহের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে তারা। তবে এতেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। সংবাদসূত্র : বিবিসি আন্তজাির্তক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সোমবার বাণিজ্যের প্রথম ভাগে লিরার প্রায় ৯ শতাংশ দরপতন হয়। ডলারের বিপরীতে লিরার বিনিময় মূল্য দঁাড়ায় ৭.২৪-এ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণার পর লিরার মূল্যমান সামান্য বেড়ে ৬.৮-এ দঁাড়িয়েছে। অবশ্য, এতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। কারণ, বিনিময় মূল্য ৬.৮ হওয়ার পরও ডলারের বিপরীতে লিরার মান অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবির্নম্ন পযাের্য় রয়েছে। গত বছর ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমান ৪০ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল। শুক্রবার ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমানের আরও ২০ শতাংশ পতন হয়। সেদিন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুকির্ ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমদানি শুল্কের পরিমাণ দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিলে লিরার দরপতন হতে শুরু করে। মাকির্ন পাদ্রি অ্যান্ড্রু ব্রানসনকে আটকের ঘটনায় তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পকের্র মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ব্রানসনকে মুক্তি না দিলে তুরস্কের ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এদিকে, গত শনিবার এক সমাবেশে জনগণকে তাদের কাছে গচ্ছিত ডলার ও ইউরো ভাঙিয়ে তুকির্ মুদ্রা লিরা গ্রহণের আহŸান জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। রোববার দেশটির উত্তর-পূবার্ঞ্চলীয় বেবাটর্ প্রদেশে এক সমাবেশে এরদোয়ান জনগণের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন, তাদের কাছে যত ডলার এবং ইউরো রয়েছে, সেসব ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে দিতে। আর নিজেদের মুদ্রার মান পুনরুদ্ধারের এই লড়াইকে তিনি ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, চীন, রাশিয়া, ইরান ও ইউক্রেনের মতো তুরস্কের শীষর্ বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপরও মাকির্ন ডলারের বদলে নিজস্ব মুদ্রা লিরার মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘোষণা দেন তিনি। তবে এখনো উদ্বেগজনকভাবে ডলারের বিপরীতে লিরার দরপতন অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার তুরস্কের মুদ্রার প্রায় ৯ শতাংশ দরপতন হয়। আর ইউরোর মূল্যমান এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমে দঁাড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, তুরস্কের এই অথৈর্নতিক সংকট ইউরোপীয় বাজারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সোমবার ‘এশিয়ান স্টক মাকেের্ট’ও ধস নেমেছে। জাপানে নিক্কের দরপতন হয়েছে ১.৭ শতাংশ, হংকং-এ ১.৮ শতাংশ, সাংহাইতে ১.৭ শতাংশ, সিডনিতে ০.৫ শতাংশ এবং তাওয়ানিজ শেয়ার বাজারের দরপতন হয়েছে ৩ শতাংশ। সোমবার মাকির্ন ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন হয়েছে ০.৩ শতাংশ। ইউরোপে দিনের প্রথম ভাগের বাণিজ্যে লন্ডনের শেয়ার সূচক ০.৫ শতাংশ কমেছে। জামার্ন ও ফরাসি শেয়ার বাজারেও একই রকমের দরপতন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পকর্জনিত উত্তেজনার মধ্যে তুরস্কের অথৈর্নতিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা থেকেই লিরার দরপতন হচ্ছে। তুরস্কের শেয়ার বাজারের ১৭ শতাংশ পতন হয়েছে। সরকারের ঋণবাবদ খরচের পরিমাণ বেড়ে এক বছরে ১৮ শতাংশে দঁাড়িয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ১৫ শতাংশে পেঁৗছেছে। লিরার দরপতন হওয়ায় উদ্বেগে রয়েছে তুকির্ কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, নিমার্ণকাজ থেকে লাভ করার আশায় যেসব তুকির্ কোম্পানি বিপুল পরিমাণ ঋণগ্রহণ করেছে, তাদের ডলার ও ইউরোতে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে।