খসড়া প্রস্তুতের নির্দেশনা

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া চলবে :পেলোসি

ওরা পাগল হয়ে গেছে, অভিশংসন করতে চাইলে, এখনই করুন, যাতে সিনেটে ন্যায়বিচার পাই: ট্রাম্প

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি
ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়িত্ব থেকে সরাতে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন (ইমপিচমেন্ট) প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এ ছাড়া বিচার বিভাগীয় কমিটিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের খসড়া (আর্টিকেল অব ইমপিচমেন্ট) প্রস্তুতের নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই 'ওরা পাগল হয়ে গেছে' বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। সংবাদসূত্র : বিবিসি, সিএনএন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও ডেমোক্রেট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি বলেন, 'নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।' এদিন তিনি ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় জর্জের দিকে, যার রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে ১৭৭৬ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, 'আমাদের গণতন্ত্র হুমকির মুখে। পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো সুযোগ প্রেসিডেন্ট আমাদের সামনে রাখেননি। কারণ তিনি আগামী নির্বাচনে ফায়দা তোলার জন্য দুর্নীতির চেষ্টা করছেন। প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত হয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করে এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।' পেলোসি বলেন, দুঃখজনক হলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি কমিটিকে অভিশংসন অভিযোগের খসড়া প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে, পেলোসির মন্তব্যের কিছুক্ষণ পরই টুইটারে এর জবাব দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, 'আপনারা আমাকে অভিশংসন করতে চাইলে, এখনই করুন, দ্রম্নত, যাতে সিনেটে আমরা একটা ন্যায়বিচার পাই, আর আমাদের পুরো দেশ নিজের কাজে ফিরে যেতে পারে।' ট্রাম্প যখন ২০২০ সালের নির্বাচনে আবারও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন, সে সময় তার অভিশংসনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলেন পেলোসি ও দলের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের (প্রতিনিধি পরিষদ) সদস্যরা। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় সেখানে ভোটাভুটিতে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষেই রায় আসবে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ ফাঁস হলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় ওঠে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে দেখা যায়, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রীতিমতো চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প। ওই ফোনালাপের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি সামনে আসে। তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তদন্ত শুরু করে ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ। তদন্তের শুনানিতে অংশ নিতে ট্রাম্পকে ডেকে পাঠায় পরিষদের গোয়েন্দা কমিটি। তবে তাতে সাড়া দেননি তিনি। ওই তদন্তকে 'ন্যক্কারজনক' হিসেবে আখ্যায়িত করে ট্রাম্পের দাবি, তাকে অভিশংসনের ক্ষমতা বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেই। গত মঙ্গলবার অভিশংসন বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা কমিটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ঘটনাক্রম ও ফোনালাপের বিবরণসংবলিত ৩০০ পাতার ওই প্রতিবেদনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অভিশংসন তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। গোয়েন্দা কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর বুধবার শুনানি শুরু করে প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় কমিটি। এতে অংশ নিয়ে তিন জন সংবিধান বিশেষজ্ঞ তাদের সাক্ষ্যে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসিত হওয়ার মতো কাজ করেছেন। তবে চতুর্থ আরেকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ট্রাম্প যা করেছেন, তা ভুল, তবে অভিশংসিত হওয়ার মতো অপরাধ নয়। সাক্ষ্য শোনার পর প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় কমিটি লিখিতভাবে অভিশংসনের অভিযোগের খসড়া প্রস্তুত করবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই খসড়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারে বাধা ও কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত ভঙ্গের অভিযোগ আনা হতে পারে। বিচার বিভাগীয় কমিটি অভিযোগের খসড়া প্রস্তুতের পর প্রতিনিধি পরিষদে এ নিয়ে ভোটাভুটি হবে। ভোটাভুটিতে অনুমোদন পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচার চালাতে বাধ্য হবে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দোষী সাব্যস্ত হলে দায়িত্ব থেকে সরতে বাধ্য হবেন তিনি। তবে কংগ্রেসের এই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় এক্ষেত্রে সেই আশঙ্কা কম।