পশ্চিমা বিশ্লেষকদের ধারণা

ফায়দা লুটতে হেগে যাচ্ছেন সু চি

ম দেশটির আগামী নির্বাচনে বৌদ্ধদের সমর্থন ধরে রাখতে সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইবেন সু চি ম প্রকৃত ঘটনা বিশ্বকে জানাতেই আদালতে হাজির হবেন তিনি দাবি জ্যেষ্ঠ মুখপাত্রের

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অং সান সু চি
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান সংখ্যালঘুদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে লড়তে অং সান সু চির নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে যাত্রার পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ফায়দা লোটাই আসল উদ্দেশ্য বলে ধারণা পশ্চিমা বিশ্লেষকদের। আগামী মঙ্গলবার হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের গণহত্যা নিয়ে অভিযোগের প্রথম শুনানি হবে। সু চি এতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা এ ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী এ রাজনীতিকের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করা হলেও দেশে তার সমর্থন আরও সুসংহত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সু চির পক্ষে একের পর এক সমাবেশ তারই ইঙ্গিত বহন করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১৬ সালে শেষবার মিয়ানমারের এই 'ডি ফ্যাক্টো' নেত্রীর পশ্চিম ইউরোপ সফরে গিয়েছিলেন। তখন তাকে বরণ করা হয়েছিল গণতন্ত্রের 'মানসকন্যা' হিসেবে; যিনি তার দেশে অর্ধশতকের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে বেসামরিকদের হাতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিন বছর পর সু চির একই মহাদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্য তার একসময়কার 'প্রতিদ্বন্দ্বী' সেনাবাহিনীর 'গণহত্যার' পক্ষে সাফাই গাইতে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় 'বিদ্রোহীদের' কথিত হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় প্রতিবেশী দেশের সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি উদ্বাস্তু রোহিঙ্গার কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নালিশ গেছে। মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসির সমর্থনে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া নভেম্বরে জাতিসংঘের আদালত আইসিজিতে মামলা করে। গাম্বিয়া তাদের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের আবাসন ধ্বংসের কথা বলেছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। তারা বলছে, গণহত্যা বা জাতিগত নিধনযজ্ঞ নয়, তাদের অভিযান নিরাপত্তা বাহিনীর টহল চৌকিতে হামলা চালানো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে। আগামী মঙ্গলবার থেকে আইসিজির ওই মামলার প্রথম শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। 'মিয়ানমারের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়' ওই মামলায় লড়তে কয়েকদিনের মধ্যেই সু চি নেদারল্যান্ডসের হেগের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে তার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে। দেশটির ক্ষমতাসীন 'ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি' দলের জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র মিয়ো নিউন্ট বলেন, 'মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এ বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে আসলে কী ঘটেছিল, তিনি (সু চি) জাতিসংঘের আদালতে তার ব্যাখ্যা দেবেন।' আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের হয়ে সু চির লড়ার ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার বন্ধু বলে পরিচিত প্রভাবশালী অনেককে বিস্মিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ব্যক্তি গণমাধ্যমকে বলেছেন, মিয়ানমারের 'স্টেট কাউন্সিলর'র এ পদক্ষেপ পশ্চিমে তার ভাবমূর্তিতে আরও কালিমা লেপে দেবে। নিজ দেশে অবশ্য সু চি নায়কের মর্যাদাই পাচ্ছেন। তার পক্ষে রাজপথে, অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। আগামী বছরের নির্বাচনের আগে তার এ অবস্থান দলের জনসমর্থনকে আরও পোক্ত করছে বলেও ধারণা পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপে মিয়ানমারের পরামর্শক রিচার্ড হর্সে বলেন, মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগকে পক্ষপাতমূলক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে মনে করে। এর বিরুদ্ধে সু চির জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা নেওয়া উচিত। অবশ্য খোদ মিয়ানমারেরই অনেক ভিন্নমতাবলম্বী মনে করছেন, স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই সু চি এটি করছেন। আগামী বছর মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে দেশটির সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন ধরে রাখতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার তোয়াক্কা না করেই সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইবেন সু চি। গত সপ্তাহে সু চির হেগে যাওয়ার সমর্থনে দেশটিতে মিছিল হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও মিছিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সু চির সাবেক মিত্র কো কো জিই বলেন, 'এখন সারাদেশে মিছিল হচ্ছে। এটা তার ভাবমূর্তিকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা। বলা হচ্ছে, এর সবটাই রাজনীতি।'