বিশেষ প্রতিবেদন

শর্তের বেড়াজালে কাশ্মীরের শিক্ষা-কর্ম

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তরুণদের বিক্ষোভ
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ছাত্ররা তিন মাস ধরে স্কুলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। অবশেষে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেইসঙ্গে কঠিন শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে স্কুলের ইউনিফর্ম পরতে বারণ করা করা হয়েছে। বরং সাধারণ পোশাক পরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘুর পথ ব্যবহার করতে, বিক্ষোভকারীদের এড়িয়ে যেতেও বলা হয়েছে। তাদের যদি স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে হয়, তবে এসব শর্ত পালন করতে হবে। তাদের নিয়ে যেতে স্কুল থেকে বাস আসবে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আর কখনো পড়েননি আবদুল রহমান রাঠোর। তার মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের কোনো একটি স্কুলে। রহমান নিজে সরকারি চাকুরে, তিনি তার মতো আরও হাজার হাজার লোকের মতো অফিসে যাচ্ছেন। তবে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি নয়। গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা ও এর রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার সময় সরকার সেখানে কারফিউ জারি, লোকজনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে সরকারি কর্মীরা বেশ কয়েকবারই ক্রুদ্ধ তরুণদের হামলার শিকার হয়েছেন। তারা সরকারি কর্মীদের অভিযুক্ত করেছে রুটিন কাজে যোগদানের মাধ্যমে জনগণের আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি করার জন্য। রহমানের সহকর্মীদের শ্রীনগর উপকণ্ঠে রাস্তায় তরুণদের একটি দল ধরে ফেলেছিল। তাদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে দেখার পর পুরো দিন তাদেরকে দড়ি দিয়ে বৈদু্যতিক খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাদেরকে কোনো খাবার বা পানি দেয়া হয়নি। সন্ধ্যার সময় এলাকার প্রবীণদের হস্তক্ষেপে 'পাপীদের' ছেড়ে দেয়া হয়। ফলে ক্রোধ থেকে রক্ষা পেতে রহমানের মতো হাজার হাজার সরকারি কর্মী এখন সাধারণ পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হন অফিসে যেতে। এই সরকারি কর্মী স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, তার ১৩ বছরের মেয়েকেও তার বাবার মতো স্কুলে যাওয়ার জন্যও একই ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে। অবশ্য তার মেয়ে মুবিনা রহমান শতাধিক দিনের ব্যবধানেও তার ক্লাসমেটদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারার সম্ভাবনায় উদ্দীপ্ত। যোগাযোগ অবরোধের কারণে সে ৫ আগস্টের পর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেনি। সে ইউনিফর্ম বা ঘুর পথ নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। সে সবকিছুই করতে রাজি তার ক্লাসমেটদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। রহমান বলেন, এসব ছোট ছেলেমেয়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারে না। বিশ্বের আর কোথাও এমন ঘটনা ঘটে না। ছাত্রদের ইউনিফর্ম না পরে স্কুলে যেতে বলাটা আর ১০টা ঘটনার মতো দেখা উচিত নয়। এতে অনেক উদ্বেগ রয়েছে। কাশ্মীর কোন দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি অবশ্য তার মেয়েকে স্কুলে যেতে দিতে রাজি নন। রহমান বলেন, 'যদি তার ওপর কিছু ঘটে? জঙ্গিরা যদি ভবনটিতে হামলা করে, তখন কী হবে? তাদের আহ্বানে সাড়া দিতে না চাওয়ায় ব্যবসায়ীদের তারা হত্যা করেছে। তারা নির্মমভাবে গরিব বহিরাগত শ্রমিকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা সত্যিই জানি না, কার বন্দুক দিয়ে কার জন্য গুলি বের হচ্ছে।' এই উদ্বেগ ইয়াসির আহমদেরও। তার ছেলে শাকির আলীর ৯ম শ্রেণিতে পরীক্ষা দেয়ার কথা। তাকেও ঘুর পথে স্কুলে যেতে বলায় তার নিরাপত্তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে শাকিরের কাছে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে স্কুলে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে জানায়, 'আমার বাবা চিন্তায় আছেন, এবং অন্যদের বাবারাও চিন্তা করেন। তবে এই পর্যায়ে পরীক্ষায় হাজির হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাশ্মীরের ছাত্ররা কয়েক দশক ধরেই সঙ্ঘাতের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে। তবে চলতি বছরটি হচ্ছে সবচেয়ে নির্মম। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কাশ্মীর সরকারের শিক্ষা বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, সরকার উপত্যকার বন্ধ থাকা স্কুলগুলো খুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলছে, ছাত্রদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনতে কৌশল বের করতে। ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা জানি না, কৌশলে কাজ হবে কিনা। ১০০ দিনের বেশি হওয়ার পরও যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, এটি তাই প্রকাশ করছে।' সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর